২০০০ সালের জানুয়ারি মাসের এক শীতের সন্ধ্যায় শিল্পপিতা নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জাহাঙ্গীরনগরের ডি-টাইপ বাসায় বসে সামনাসামনি প্রথম পরিচয় হয়েছিলো হুমায়ুন ফরিদীর সাথে, কাছ থেকে কিংবদন্তিকে দেখে অনেকটাই আপ্লুত ছিলাম; এর পরের ঘটনা অনেক লম্বা—তিনি আপনজন করে নিয়েছিলেন আমাকে।
আমরা যারা শিল্পপিতা নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের কাছের ছিলাম সবাই সেলিম আল দীনকে বাবা বলে ডাকতাম, আমার মতো এমন কুড়িয়ে পাওয়া অগণিত সন্তান ছিলো সেলিম আল দীনের। মনে পড়ে শীতের সেই দীঘল সন্ধ্যার কথা, তখন ঢাকা থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর চলে যেতাম, জাবির বন্ধুদের সাথে হলে থাকতাম আবার কখনো বা সেলিম আল দীনের বাসাতেই গল্পে গল্পে রাত ভোর হয়ে যেতো, এমনই এক রাত ভোর হওয়া প্রাণবন্ত আড্ডায় প্রথম মুখোমুখি পরিচয় হয়েছিলো হুমায়ুন ফরিদীর সঙ্গে, সেই থেকে তাঁর সঙ্গে সখ্যতা; সেলিম আল দীনের নিজ হাতে গড়ে তোলা হুমায়ুন ফরিদীর সাথে আমার একটি পান পরিবেশের বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিলো; তিনি আমাকে ভালোবাসতেন সন্তানের মতোই। আজ অনেক বেশি মনে পড়ছে তাঁকে, সেলিম আল দীনের অমর সৃষ্টিকর্ম কিত্তনখোলা’র সেই ছায়ারঞ্জনকে মনে পড়ছে।
বাংলাদেশের মঞ্চনাটক, টেলিভিশন এবং সিনেমা জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। যাঁর রক্তে মিশে ছিলো অভিনয়। হুমায়ুন ফরীদির স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আলোচনা শুরু করছি।
অভিনয়ের সাবলীলতায় মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের কোটি মানুষকে মোহিত করেছেন এই অভিনেতা। দাপুটে অভিনয় করে মানুষকে হাসিয়েছেন, আবার কখনো বা কাঁদিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকার ধানমন্ডিতে তাঁর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ফুসফুসের জটিলতাসহ নানা সমস্যার কারণে তিনি অসুস্থ ছিলেন। সত্তরের দশকে মঞ্চ নাটক দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হলেও অসংখ্য টিভি নাটকে এবং পরে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিভিন্ন চরিত্রে সমান দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো হুমায়ুন ফরীদির। বিচিত্রধর্মী নানা চরিত্রে তাঁর অসামান্য অভিনয় কৌশল থেকে বর্তমান প্রজন্মের অভিনেতাদের অনেক কিছু শেখার আছে। একজন অভিনয়শিল্পী সব মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করতে পারেন না। সবার সে ক্ষমতা নেই। সীমাবদ্ধতা থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে হুমায়ুন ফরীদি পেরেছিলেন। কী মঞ্চে, কী টিভি নাটকে, কী চলচ্চিত্রে—একটা সময় ছিলো, তাঁর নামে নাটক চলতো, চলচ্চিত্র চলতো। এই শক্তিমান অভিনেতার প্রয়াণ বাংলাদেশের অভিনয় জগতের জন্য বড় একটা ক্ষতি। আমাদের জন্যে আনন্দের সংবাদ, দেরিতে হলেও ২০১৮ সালে অভিনয়ে হুমায়ুন ফরীদি (মরণোত্তর) একুশে পদক লাভ করেছেন। তিনি জীবিতকালে এই সম্মাননা পেলে আরো বেশি খুশি হতেন।
হুমায়ুন ফরীদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ফরীদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
“মহিলা সমিতির সামনে দেখলাম ছোটখাট একটা জটলা, এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, এক যুবক চা খাচ্ছে, আর একদল যুবক তাকে ঘিরে ধরে চা খাওয়া দেখছে, যুবকটি হুমায়ুন ফরিদী। আমার এই বইটি সেই যুবককে উৎসর্গ করলাম।”—হুমায়ূন আহমেদ তাঁর একটি বইয়ের উৎসর্গপত্রে এমনটিই লিখেছেন।
হুমায়ুন ফরীদি মানেই কোনো রকম ভাব নেই, বিরক্তি নেই, সাধারণ মানুষ রাস্তাঘাটে ঘিরে ধরলে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। কেবল কি একজন অভিনেতা হিসেবেই দুর্দান্ত ছিলেন? ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন মজার একজন মানুষ। শুটিংস্পটে রসিকতা করে সবাইকে হাসাতেন। তাঁর ‘চুটকি’ শুনে হাসেননি এমন কাউকেই বুঝি পাওয়া যাবে না। পছন্দ করতেন আড্ডা দিতে। তাঁর আড্ডার ছিলো নিজস্ব একটা জগৎ। ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও’ প্রায়ই এমন একটা ফিলোসফিক্যাল কথা বলতেন তিনি। সহ-অভিনেতাদের কাছে তাঁর দরাজ দিলের কথা শোনা যায়। নাট্যাঙ্গনে নাকি একটি কথা প্রচলিত ছিলো যে, যদি টাকা লাগে তবে হুমায়ুন ফরীদির কাছ থেকে ধার নাও। কারণ ফেরত দিতে হবে না। কাউকে টাকা দিলে তা নাকি বেমালুম ভুলে যেতেন। তাই কোনদিন ফেরতও চাইতেন না। এ প্রসঙ্গে একদিন তিনি বলেন, ‘আমি টাকা ধার দিয়ে ইচ্ছে করে ভুলে যাই, কারো কাছে পাওনা টাকা চাইতে ভালো লাগে না আমার।’
হুমায়ুন ফরীদি একজন আজন্ম অভিনেতা, আপাদমস্তক শিল্পী। এ দেশের যে কোনো ধরনের অভিনয়শিল্পীর কাছে এক আদর্শ, অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিন দশকে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে। যেখানেই গিয়েছেন সাফল্যের বরপুত্র হয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই যোগ করেছেন বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা। অভিনয়ের মাধ্যমে সব সময় ছড়িয়েছেন বাঁচার আলো, জীবনের আলো। শাদামাটা জীবনযাপনের চলাচলেই পথ হেঁটেছেন জীবনভর। অথচ মনে-প্রাণে ছিলেন দারুণ রঙে রঙিন এক উজ্জ্বল মানুষ, তিনি হুমায়ুন ফরীদি। অসাধারণ অভিনেতা। মঞ্চে, ক্যামেরার সামনে এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও যার দাপুটে সাবলীলতা মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করতো যে কাউকে। সবার প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করে পর্দায় আবিষ্ট করে রেখেছিলেন কোটি কোটি দর্শককে। হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন বাংলাদেশের অভিনয়জগতের এক উজ্জ্বল তারা। মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে ছিলো তাঁর অবাধ যাতায়াত। এই শিল্পী সম্পর্কে তাঁর অগ্রজ শিল্পী আল মনসুর বলেছিলেন, ‘এ মাটিতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চির উজ্জ্বল অভিনেতা হলো হুমায়ুন ফরীদি।’ এটি কোনো অতিমূল্যায়ন নয়। হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা স্বীকার করবেন, এত বড় মাপের শিল্পী সত্যিই এ মাটিতে জন্ম নেওয়া শিল্পীদের মধ্যে বিরল।
অভিনেতা ও নাট্য সংগঠক হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায়। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। বাবার বদলির চাকুরির সুবাদে ফরীদিকে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ অসংখ্য জেলায় ঘুরতে হয়েছে। ছোটবেলায় ছন্নছাড়া স্বভাবের জন্য ফরীদিকে ‘পাগলা’, ‘সম্রাট’, ‘গৌতম’-এমন নানা নামে ডাকা হতো। তিনি নিজ পৈতৃক নিবাস গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং চাঁদপুর কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করেন। হুমায়ুন ফরীদি ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন (অর্গানিক কেমিস্ট্রি) বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পিতার কর্মস্থল চাঁদপুর ঘুরে চলে গেলেন যুদ্ধে। নয় মাসের যুদ্ধ শেষে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় ফিরলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আর ফেরেননি।
স্বাধীনতার পর টানা পাঁচ বছর বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে শেষে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীনের সংস্পর্শে আসেন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীও হয়ে ওঠেন। এই ক্যাম্পাসেই ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন এবং নাট্যোৎসবের প্রধান আয়োজক হিসেবে কাজ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, উৎসবের সূত্রেই নাট্যাঙ্গনে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে।
স্বাধীনতা উত্তরকালে বাঙালির নিজস্ব নাট্য আঙ্গিক গঠনে গ্রাম থিয়েটারের ভূমিকা অসামান্য। এর মূল সঞ্চালক ছিলেন কয়েকজন নাট্য ব্যক্তিত্ব যেমন সেলিম আল দীন, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, আফজাল হোসেন, গোলাম মোস্তফা, পিযূষ বন্দোপাধ্যায় ও হুমায়ুন ফরীদি। ঢাকা থিয়েটারের ‘ভূত’ নাটক নির্দেশনার মাধ্যমে মঞ্চ নাট্যধারায় অভিষেক ঘটে হুমায়ুন ফরীদির। সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চে উঠে আসেন। অবশ্য এর আগে ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ অভিনয় করেন। বাংলাদেশে যখন নাট্য মঞ্চের সংকট তখন তিনি মহিলা সমিতি এবং গাইড হাউজ থেকে মঞ্চনাটকে অভিনয় চালিয়ে যান। বেশকিছু মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর অভিনীত মঞ্চ নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: শকুন্তলা, কির্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, মুন্তাসীর ফ্যান্টাসি এবং ফণীমনসা, ধূর্ত উইঁ। মঞ্চ নাটককে প্রসারিত করার লক্ষ্যে তিনি গড়ে তোলেন নাটক কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও গ্রাম থিয়েটার এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন।
টেলিভিশন নাটকে হুমায়ুন ফরীদির অভিষেক ঘটে নিখোঁজ সংবাদ নাটকের মধ্য দিয়ে। এরপর নীল নকশার সন্ধানে (১৯৮২), দূরবীন দিয়ে দেখুন (১৯৮২), ভাঙ্গনের শব্দ শুনি (১৯৮৩), বকুলপুর কত দূর (১৯৮৫), দু’ভুবনের দুই বাসিন্দা, একটি লাল শাড়ি, মহুয়ার মন (১৯৮৬), সাত আসমানের সিঁড়ি (১৯৮৬), একদিন হঠাৎ (১৯৮৬), চান মিয়ার নেগিটিভ-পজেটিভ (১৯৮৬), ওযাত্রা (১৯৮৭), সংসপ্তক (১৯৮৭-৮৮), পথের সময় (১৯৮৯), দুই ভাই (১৯৯০), শীতের পাখি (১৯৯১), কোথাও কেউ নেই (১৯৯০), সমুদ্রের গাঙচিল (১৯৯৩), তিনি একজন (২০০৫), চন্দ্রগ্রস্ত (২০০৬), কাছের মানুষ (২০০৬), মোহনা (২০০৬), ভবের হাট (২০০৭), শৃংখল (২০১০), প্রিয়জন নিবাস (২০১১), আরমান ভাই দি জেন্টলম্যান (২০১১); ইত্যাদি নাটকে সফল অভিনয় করেন। এর মধ্যে সংশপ্তক নাটকের কান কাটা রমজান চরিত্রটি ফরীদিকে বাঙলা নাট্যামোদী দর্শকের কাছে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। তিনি টেলিভিশন নাট্যাভিনয়ের প্রথাগত ধ্যান ধারণা ভেঙ্গে সৃষ্টি করেন এক নতুন অভিনয় ধারা।
চলচ্চিত্রে তাঁর আগমন ঘটে তানভীর মোকাম্মেলের হুলিয়া ছবির মাধ্যমে। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’। চলচ্চিত্রে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করে এক নতুন মাত্রা আনেন। হুমায়ুন ফরীদি কিছু বাঙলা চলচ্চিত্রে খলনায়কের অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি একাধারে আর্ট ফিল্ম এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আর্ট ফিল্মের মধ্যে তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হুলিয়া, ব্যাচেলর, আহা, মাতৃত্ব, বহুব্রীহি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া ও একাত্তরের যিশু।
তাঁর অভিনীত বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দহন, সন্ত্রাস, বিশ্বপ্রেমিক, ত্যাগ, মায়ের মর্যাদা, অধিকার চায়, মায়ের অধিকার, ভণ্ড, রিটার্ন টিকেট, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, দূরত্ব, পদ্মানদীর মাঝি; ইত্যাদি। হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করে সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরীদির দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি। বাংলাদেশের নাট্য ও সিনেমা জগতে তিনি অসাধারণ ও অবিসংবাদিত কিছু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ও রোমান্টিক এ মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে সহপাঠীর বোন ফরিদপুরের মেয়ে নাজমুন আরা বেগম মিনুর গলায় বেলী ফুলের মালা পড়িয়ে বিয়ে করেছিলেন। তখন এ বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাঁদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। নাম দেবযানী। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডিতে নিজের বাসার বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। বিষাদের কালো আভা ছড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন অভিনয়ের কিংবদন্তি এ পুরুষ।
রচনাকাল:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩