‘অপু’র
রোম্যান্টিকতা থেকে ‘অগ্রদানী’র চক্রবর্তী বামুনের অদ্ভুত যন্ত্রণা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তুলে
আনেন তাঁর দু’চোখে৷ টুইস্ট নাচিয়ে এই তিনি বলেন ‘কে তুমি নন্দিনী’, পরক্ষণেই
জেতার খিদে বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠেন ‘ফাইট কোনি ফাইট’৷ বাঙালির সাংস্কৃতিক
ইতিহাসকে তিনি এভাবেই দিয়েছেন একের পর এক মুক্তো৷ আর তা হাতে নিয়ে মনভরে
দেখেছে তাবৎ বাঙালি, কী করে তাঁর হাত ধরেই বাঙলা সংস্কৃতির দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে
আন্তর্জাতিকতা! আজও তা বহমান৷ আজও বাঙালি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে৷ অসংখ্য চরিত্রের সমাহারে তৈরি তাঁর নিজের হাতের ইতিহাস, নানা রঙে
এখানে ফিরে ফিরে চাওয়া সৌমিত্র-স্বাদ৷
কলকাতা বেতারের জন্ম ২৬ আগস্ট, ১৯২৭ সাল। তার ঠিক ৩০ বছরের মাথায় এখানে চাকুরি নেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সময়টা ১৯৫৭, তাঁর বয়স তখন ২২। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় মাস্টার্সের ছাত্র। কিন্তু তাঁর মন টানছে সৃষ্টিশীল জগৎ। প্রথাগত লেখাপড়া আর ভালো লাগছে না। তাই মনের টানেই বেতারে চাকুরি নেওয়া এবং এম এ পড়া মাঝখানেই স্থগিত। ১৯৫৭-র শেষ দিক থেকে ১৯৫৯-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত—সাকুল্যে দেড় বছর তিনি চাকুরি করেছেন ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেসে। বহাল হয়েছিলেন ঘোষক ও সংবাদপাঠক হিসেবে। প্রথমে কিছুদিন চুক্তিভিত্তিক, পরে স্থায়ী হন। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ, তারপর ‘অপুর সংসার’-এ ‘অপু’ হয়ে চিত্রাভিষেক এবং বেতার থেকে ইস্তফা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে পরে ভারতবর্ষের অভিনয় দুনিয়ার অন্যতম দিকপাল হয়ে উঠেছিলেন, তাতে শুরুর ওই দেড় বছরের বেতার-জীবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো। তাঁর নিজের কথা থেকেই এর আঁচ পাওয়া যায়।
২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ‘প্রণবেশ সেন স্মারক-বক্তৃতা’র বক্তা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বিষয় ছিলো তাঁর বেতার-জীবন। আমরা জানি, বেতারের জন্মলগ্ন থেকেই এই মাধ্যম কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো বাঙালি-জীবনে। ছোটবেলায় কৃষ্ণনগরে থাকার সময় থেকেই বেতারের নানা অনুষ্ঠান সৌমিত্রকে গভীরভাবে আকর্ষণ করতো। যার মধ্যে ভোরে উঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার আকর্ষণ ও মুগ্ধতার কথা তিনি বক্তব্যের শুরুতেই জানিয়েছিলেন। আর পাঁচটা বাঙালির মতো তখন থেকেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিক-সহ আরও কিছু নাম তাঁর মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলো। ক্রমে ক্রমে দিনযাপনের অন্যতম সঙ্গী হয়ে উঠেছিলো বেতার।
১৯৫১ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় আসেন। সিটি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, তারপর এম এ পড়তে পড়তে, ‘অডিশন’-এ পাশ করে ঢুকলেন বেতারে। প্রায় ২০০জন চাকুরিপ্রার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছিলেন দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে ছিলেন পরবর্তীকালের আর এক বিখ্যাত চিত্রাভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়। তিনি তখন সিনেমার জগতে অল্পবিস্তর সহকারী চিত্রপরিচালকের কাজ করছেন। তখনও অভিনয় শুরু করেননি। অডিশনের ফল অনুযায়ী অনিলবাবুরই বেতারে চাকরিটা হয়েছিলো। ঠিক সেই সময়েই তাঁর সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ এসে গেলো। তাই চাকরিটা আর নিলেন না। ফলে, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়লো।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিভাবিন্যাসের বহুমুখী দিক আমাদের জানা। চলচ্চিত্র এবং মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাট্যকার, পরিচালক, কবি, গদ্যকার, আবৃত্তিশিল্পী, ‘এক্ষণ’-এর মতো পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক, ছবি আঁকায় পারদর্শী এবং চিরকাল সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন ও প্রতিবাদী এক শিল্পী। কিন্তু, এত রকম বিচ্ছুরণের মধ্যেও প্রত্যেক প্রতিভাধরের মতো তাঁরও শিল্পপ্রকাশের মূল অভিমুখ শুরু হয়ে গিয়েছিলো স্কুল-জীবন থেকেই। বলাই বাহুল্য, তা অভিনয়ের আকাঙ্ক্ষা। তাই বোধহয় যে কাজই তিনি করেছেন, তার মধ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়-তৃষিত মনের একটা ছাপ থেকে গেছে। বেতারের কর্মজীবনও এর ব্যতিক্রম ছিলো না।
বেতারে কাজ করার সময়, তাঁর প্রথমেই মনে হয়েছিলো কণ্ঠ-ব্যবহার শিক্ষার এটি আদর্শ স্থান। এখানে সমস্ত চিত্রকল্পটিই তৈরি করতে হবে শুধুমাত্র ভাষ্যের মাধ্যমে। এখানে উপযুক্ত নাটকীয় কণ্ঠ-প্রক্ষেপণের সঙ্গে ভাষার ব্যবহারেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। সৌমিত্র বলেছেন, “বেতারে কাজ করেছিলাম বলেই পরবর্তী সময়ে ফিল্মের শুটিংয়ে শব্দধারক যন্ত্রের ব্যবস্থা আমার বুঝতে সুবিধে হয়েছিলো। মাইক্রোফোন কেমন করে ব্যবহার করতে হয় তা বেতারেই বোধহয় প্রাথমিকভাবে শিখেছিলাম। বেতারে ঘোষণা, সংবাদপাঠ ইত্যাদির দায়বহন করতে গিয়ে আমার বাচিক পরিশীলনও খানিকটা এগোতে পেরেছিলো।”
এছাড়া, বেতার থেকে হয়েছিলো তাঁর ধৈর্যের শিক্ষা। ঘোষক হিসেবে কোনও অনুষ্ঠান শুরুর আগে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অল্প কথায় গোটা অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে শ্রোতাদের আগাম ধারণা দিতে হত। এর জন্যে আয়ত্ত করতে হয়েছিলো উপযুক্ত শব্দচয়ন এবং তার সঙ্গে বাংলা বলার ক্ষেত্রে পরিমিতি বোধ। পরবর্তীকালে আমরা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা বলা বা লেখায় দেখেছি অসাধারণ উচ্চারণ ও বাক্যবিন্যাসের অসামান্য বুনন। শুরুর বেতার-জীবনের তো এ ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলোই। এ ছাড়া, অনুষ্ঠান যতক্ষণ চলতো, ততক্ষণ স্থিরভাবে অপেক্ষা করে, অনুষ্ঠান শেষে সমাপ্তি-ঘোষণা করতে হতো। অসম্ভব ধৈর্য রাখতে হতো এই কাজের জন্য। তিনি নিজেই বলেছেন, তাঁর স্বভাবে প্রথম থেকে যে ধৈর্যের অভাব ছিলো, বেতারে কাজ করে তা অনেকটাই পাল্টাতে পেরেছিলেন তিনি, ধৈর্যের এই অনুশীলন তাঁর পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে এসেছিলো।
বেতারে
যাঁরা ঘোষকের কাজ করেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের কণ্ঠস্বর ভালো হওয়া প্রয়োজন।
সৌমিত্র লক্ষ্য করেছিলেন, এঁদের মধ্যে অধিকাংশ জনই নিজের গলা সম্পর্কে এমন
অতিরিক্ত সচেতন থাকতেন যে, তাঁদের বলার ধরনে কৃত্রিমতা ও নিষ্প্রাণ ভাব প্রকাশ
পেতো। এটা তাঁর একেবারেই ভালো লাগতো না। তবে কয়েকজন ছিলেন ব্যতিক্রম, যাঁদের বেতার-ভাষ্য
শিক্ষণীয় ছিলো সৌমিত্রর কাছে। অবশ্যই এ ব্যাপারে সেরার আসনে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র। অনুষ্ঠানের রূপভেদ অনুযায়ী যিনি অসামান্য ভঙ্গিতে তাঁর ভাষ্য-ধরন বদলে
ফেলতেন। অনেক সময় বীরেনবাবুকে পরামর্শ দিতেও দেখেছেন তিনি। কোনও নতুন ঘোষক যদি
কিছু ভুল করে ফেলতেন, তখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ সস্নেহে সেই আনকোরা ঘোষককে বলতেন, “শোনো
বাবা, তুমি যে এটা এ রকম করে বলছো, এতে তো ভুল মানে হচ্ছে। তুমি বরং ও রকম করে
বলো…।” বলে নিজে দেখিয়ে দিতেন। এইসব অভিজ্ঞতার কথা সৌমিত্র বলেছিলেন তাঁর বক্তব্যে।
তাঁর ভালো লাগার মধ্যে ছিলো জয়ন্ত চৌধুরী, নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজনের
বেতার-ভাষ্য। বাংলা ভাষা প্রয়োগ ও তাকে সাবলীলভাবে উপযুক্ত নাটকীয় সংলাপের ধরনে
উপস্থাপন—এটাই টানতো সৌমিত্রকে। এই শিক্ষাই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়,
আবৃত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম সম্পদ হয়ে উঠেছিলো।
বেতার-জীবনে
সৌমিত্রর কাছে স্বাভাবিকভাবেই অন্যতম আকর্ষণের বিষয় ছিলো বেতার-নাটক। কিন্তু, তখন
বেতারে হওয়া বেশিরভাগ নাটকই ছিলো এক-একটি মঞ্চসফল নাটকের শ্রুতিরূপ, যা তাঁর কাছে
ঠিক গ্রহণযোগ্য লাগতো না। কারণ, এগুলো হয়তো প্রসেনিয়াম থিয়েটার বা মঞ্চে অভিনয়ের
ক্ষেত্রে উপযোগী, কিন্তু বেতারের ক্ষেত্রে নয়। এক সময়ে বিদেশি বেতারে অভিনীত হতো
‘ওয়র অব দ্য ওয়ার্ল্ডস’ নামে একটি অসাধারণ নাটক। এটি না শুনলেও, নাটকটি পড়ে সেই
সময় সৌমিত্র বুঝেছিলেন, এ রকম নাটকই বেতারে হওয়া দরকার। যেখানে শুধুমাত্র সংলাপ,
উপযুক্ত এফেক্টস মিউজ়িকের সহায়তায় সম্পূর্ণ নাট্য-চিত্রকল্পটি তৈরি করতে পারে।
বেতারে চাকুরি করার সময় না করলেও, পরবর্তীকালে কয়েকটি বেতার-নাটকে অভিনয় করেছিলেন
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার মধ্যে শ্যামল ঘোষের পরিচালনায় জীবনানন্দ দাশের লেখা
‘নিরুপম যাত্রা’ গল্পের নাট্যরূপ এবং রমাপ্রসাদ বণিকের নাট্যরূপে বার্টোল্ট
ব্রেশট-এর ‘থ্রি পেনি নভেল’ (‘তিন পয়সার পালা’ নয়)—বেতার নাটক দুটিতে অভিনয় করে
বিশেষ আনন্দ পেয়েছিলেন সৌমিত্র, কারণ তাঁর মতে এগুলো ‘মঞ্চ-নাটকের চলন থেকে বেশ
দূরে ছিলো।’
১৯৫০-এর দশকের পরিমণ্ডলের প্রত্যক্ষপ্রভাবে বেড়ে উঠেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তখনকার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি সব কিছুতেই এসেছিলো নবধারা। পুরনো
ধ্যানধারণা ভাঙার চেষ্টা চলছে, প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রবল প্রভাব, আন্তর্জাতিক
ভাবধারার প্রবেশ ঘটছে অবাধে, একই সঙ্গে বিজন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র,
সত্যজিৎ রায়ের মতো সৃজনশিল্পীদের স্পর্শে নাট্য ও চলচ্চিত্রজগতে আসছে নতুন যুগ। এ
সবের মধ্যে সক্রিয়ভাবে মিশে রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নানাভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ
করে এগোতে চাইছেন অভীষ্ট লক্ষ্যে। এ ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে তাঁর ব্যতিক্রমী
পদক্ষেপ। তখন নাট্য ও অভিনয় জগতে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর যুগ শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু
সৌমিত্র অভিনয় শিখতে যাচ্ছেন তাঁরই কাছে। পঞ্চাশের দশকের ভাঙাগড়ার মধ্যে থেকেও
তিনি প্রাধান্য দিচ্ছেন বাংলার ঐতিহ্যগত পরম্পরাকে। বেতারে চাকুরি করার সময় তিনি
শিশির ভাদুড়ীর বেতার-সংলাপ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। শুধু নাটকীয়তা নয়, বাংলা ভাষাকে
মর্যাদা দিয়ে কীভাবে তাকে কথ্যভাষার আদর্শ করে তোলা যায়, তা মন দিয়ে তিনি তখনই
লক্ষ্য করেছিলেন নাট্যাচার্যের বলার ধরনে। সে দিনের বক্তৃতায় সৌমিত্র বলেছিলেন,
“শিশিরকুমার ভাদুড়ীর গদ্য ও পদ্য সংলাপের ললিত প্রবাহ শুনে ভাবতাম, এটাই কথিত
বাংলার আদর্শ নিদর্শন হয়ে থাকা উচিত।”
আমরা জানি, সারা জীবন
বাংলা ভাষা ও বাঙালিয়ানার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ও নিষ্ঠাবান ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিলো আজীবন ও আন্তরিক। এ বিষয়ে তাঁর
শুরুর ওই বেতার-জীবনের যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো, তা বেশ কয়েকবার প্রকাশ পেয়েছিলো
তাঁর সেদিনের স্মারক-বক্তৃতায়। একেবারে শেষে যে কথা তিনি বলেছিলেন, আজ শুধু তা অত্যন্ত
প্রাসঙ্গিকই নয়, শিক্ষণীয়ও বটে—“যেটা বলার, বারবার বলার, বাঙালিয়ানার প্রতি বাঙালির
টান না ফিরে এলে কোনও প্রতিরোধ শুরুই হতে পারে না।”
‘অপুর সংসার’: বাঙালি রোমান্সের মধুর কবিতা:
অপর্ণার কাজের বোঝা কমাতে কাজের লোক রাখার কথা ভাবছে
অপু৷ কিন্তু মাইনে কে দেবে? কেনো, আর একটা টিউশন নেবে সে! একেই অফিস করে ছেলে
পড়িয়ে রাত করে বাড়ি ফেরা৷ কিন্তু উপায় কী! অপর্ণা চোখে কৌতুক এনে বলছে, বরং
যে টিউশনিটা আছে সেটাও ছেড়ে দিক অপু৷ তাহলে কী হবে? অপর্ণার উত্তর, ‘তাহলে আমার
গরীব বর সন্ধের আগেই বাড়ি ফিরে আসবে৷’ বাঙালি রোমান্সের এর থেকে মধুর কবিতা
বোধহয় আজ অবধি লেখা হয়নি৷ সে কবিতায় অলংকার যদি অপর্ণা হয়, তবে ছন্দ-মাত্রার
বাঁধুনি নিশ্চিতই অপু৷ বলা ভালো অপুরূপী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ বিভূতিভূষণ
বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিয়তিনির্দিষ্ট ঘরছাড়ার ডাক অপুর জন্য তুলে রাখলেন আর
সত্যজিৎ রায় যে অপুকে করে তুললেন বাঙালি যুবকের আর্কিটাইপ, তা বোধহয় এমন আবেদন
নিয়ে ধরাই দিতো না যদি না অপু হয়ে ধরা দিতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ অসংখ্য
চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি৷ তবে নিঃসন্দেহে বহু বাঙালি চোখ বুজে সৌমিত্র
চট্টোপাধ্যায়কে যে রূপে দেখেন তা এক এবং অদ্বিতীয় অপু হিসেবেই৷
‘সাত পাকে বাঁধা’: দু’চোখে যন্ত্রণার কী অসম্ভব অভিব্যক্তি ধরে রেখেছিলেন
সৌমিত্র:
দু’চোখে রাগ-ক্ষোভ-অভিমান এনে পুরুষটির পাঞ্জাবী ছিঁড়ে
দিচ্ছেন এক অভিমানীনি নারী৷ বাঙালিমাত্রই জানেন এই দৃশ্য অজয় করের ছবি ‘সাত পাকে
বাঁধা’র৷ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত আর এক সেরা চরিত্র এই ছবির সুখেন্দু৷
অপু আর অপর্ণার দাম্পত্য যদি জীবনের বাস্তবতার একপিঠ হয়, তবে আর একপিঠে নিশ্চয়ই
থাকবে দাম্পত্যের এই ছবিটিও৷ আর দু’চোখে যন্ত্রণার কী অসম্ভব অভিব্যক্তি ধরে
রেখেছিলেন সৌমিত্র, অথচ কোথাও বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জিত নেই৷
বাঙালির ‘কোনি’ আর তার ‘ক্ষিদ্দা’:
হাতে একটা লাঠি নিয়ে দৌড়চ্ছেন তিনি৷ সামনে সাঁতার কাটছেন
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাঙালির ‘কোনি’ আর তার ‘ক্ষিদ্দা’৷ দু’চোখে জেদ,
দৃঢ়তা, জেতার আগুন৷ তিনি তাতছেন নিজে, আর তাতাচ্ছেন কোনিকে৷ যেন রামকৃষ্ণ তাঁর
জীবনের আধ্যাত্মিক সঞ্চয় শিষ্য বিবেকানন্দের হাতে তুলে দিয়ে যেমন ফকির
হয়েছিলেন, তেমনই ফকির হতেই চাইছেন ক্ষিদ্দা৷ কেনো না তিনি যে জানেন, এই ফকির
হওয়া যে রাজা হওয়ারই নামান্তর মাত্র৷ মতি নন্দীর কাহিনীর ভেতর থেকে ক্ষিদ্দাকে
তিনি যেভাবে নির্মাণ করেছিলেন, তাঁর তুলনা অন্যকিছু হতে পারে না৷ অভিনয়ের
মানদণ্ডে নিজেকেই নিজে ছাপিয়ে যাওয়ার যদি কোনো যথার্থ বিশেষণ থাকে, তবে তা যেন
শুধু তাঁর জন্যই বরাদ্দ৷
‘অগ্রদানী’ : ব্রাহ্মণরূপী সৌমিত্র:
বংশে বাতি দিতে বাপের নাতি আসার খবর শুনে যে গ্রাম্য পুরোহিত
আনন্দে দু’হাত তুলে নেচে গেয়ে মাত করেছিলো, সেই ব্রাহ্মণই নিজের সন্তানের
পিণ্ডগ্রহণ করেছিলেন৷ নিয়তির পরিহাস৷ আর কী ভয়ংকর সুন্দর সেই মুহূর্ত যখন
পর্দায় সেই পরিহাসকে তিনি মূর্ত করে তোলেন৷ ছবির নাম ‘অগ্রদানী’৷ আর এই
চক্রবর্তী ব্রাহ্মণরূপী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালির আন্তর্জাতিকতার
ধারকমুদ্রা৷
‘ফেলুদা’ : বাঙালির স্বপ্নের ফেরিওয়ালা:
সিধু জ্যাঠা তাঁকে বলেছিলেন মনের জানালাটা খুলে রাখতে, আজীবন
তাই জ্ঞানের দুয়ারে পায়চারি করেছেন ‘ফেলুদা’৷ তাঁর বুদ্ধিমান দু’চোখে
গোয়েন্দা আছে যতখানি, ততোখানিই আছে এক শিক্ষিত, জ্ঞান অণ্বেষি যুবক৷ ফেলুদা তাই
বাঙালির কাছে এক ধরনের হতে চাওয়া স্বপ্নের ফেরিওয়ালা; আর সেই সাধপূরণ অধরাই থেকে
যেত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছাড়া৷
‘আতঙ্ক’ : মাষ্টারমশাই:
দু’গাল ঝুলে পড়েছে৷ হাঁটছেন একটু ঝুঁকে, কিন্তু দৃঢ়,
ঋজু সে হাঁটা৷ তাঁরই ছাত্রকে দেখে ফেলেছেন খুন করতে৷ কিন্তু তবু সত্যি থেকে
সরে যাননি৷ ছেলে মার খেয়েছে, এমনকী মেয়েও জীবনসংকটে, তবু নুয়ে পড়েননি তিনি৷
দর্শক শেষমেশ জেনেছে ‘আতঙ্ক’ ছবির মাস্টারমশাই যা দেখেছে তা আর কোনওভাবেই বদল হবে
না৷ নিজেকে ভেঙেচুরে অপরূপ গড়ে নেওয়ার যদি কোনো উদাহরণ থাকে, তবে এই চলচ্চিত্রে
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ঠিক তাই-ই৷
‘অশনি সংকেত’ : গঙ্গাচরণ চক্রবর্তী বাঙালির অহংকার:
সিঙ্গাপুর কোন দিকে? বলতে পারেন পণ্ডিতমশাই৷ আর তাঁর জবাব, সে
মেদিনীপুর ছাড়িয়ে আরও কতো দূরে৷ এখানেও তিনি৷ কোথায় সেই শৌখিন অপু, কোথায়
তাঁর সাংস্কৃতিক আভিজাত্য, কী অবলীলায় তিনি গ্রাম্য এক পণ্ডিতমশাই হয়ে উঠেছেন৷
‘অশনি সংকেত’-এর গঙ্গাচরণ চক্রবর্তী বাঙালির আর এক অহংকার৷
খেরোখাতায় লেখা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের অনন্যতা:
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
সৌমিত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলকাতা সিটি কলেজে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য
নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার
ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তী কালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত
পরিচালকদের সাথেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি
ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন,পরিচালনা
করেছেন। তিনি একজন খুব উঁচুদরের আবৃত্তিকার; বাঙলা কবিতা আবৃত্তির ইতিহাসে সৌমিত্র
নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিলো বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার
শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতামহের আমল থেকে
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন।
সৌমিত্র’র পিতা কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন এবং প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি
আসতেন। সৌমিত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স
বিদ্যালয়ে। তারপর পিতার চাকরি বদলের কারণে সৌমিত্র’র বিদ্যালয়ও বদল হতে থাকে এবং
তিনি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জেলা স্কুল থেকে। তারপর কলকাতার সিটি
কলেজ থেকে প্রথমে আই এস সি ও পরে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ অনার্স পাশ করার পর
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দুই বছর পড়াশোনা করেন।
সত্যজিৎ
রায়ের সঙ্গে কাজ:
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর সর্বপ্রথম কাজ প্রখ্যাত চলচিত্র
নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার ছবিতে যা ১৯৫৯ সালে নির্মিত হয়। তিনি এর আগে
আকাশবাণী কলকাতার ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি
সত্যজিৎ রায়ের সাথে ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি সত্যজিৎ রায় নির্মিত
বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে আবির্ভূত হন। তাঁর অভিনীত কিছু কিছু চরিত্র
দেখে ধারণা করা হয় যে তাঁকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্যগুলো লেখা হয়। তাঁর
অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হলো ‘ফেলুদা’। তিনি সত্যজিৎ রায়ের
পরিচালনায় ‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ চলচ্চিত্রে ‘ফেলুদা’র ভূমিকায়
অভিনয় করেছেন। প্রথমে ‘ফেলুদা’ চরিত্রে তাঁর চেয়েও ভালো কাউকে নেওয়ার ইচ্ছে
থাকলেও তাঁর অভিনীত ‘ফেলুদা’র প্রথম চলচ্চিত্র ‘সোনার কেল্লা’ বের হবার পর সত্যজিৎ
রায় স্বীকার করেন যে, তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ চলচ্চিত্রটি করতে পারতো না।
সম্মাননা:
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ
সম্মান ‘Officier des Arts et Metiers’ পেয়েছেন। সত্তরের দশকে তিনি পদ্মশ্রী পান
কিন্তু প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি তা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীকালে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কার
লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে
পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় সম্মাননা বাঙালি মননে তাঁর স্তম্ভসমান
জনপ্রিয়তা।
সৌমিত্র
চট্টোপাধ্যায় অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র:
অপুর সংসার (১৯৫৯), ক্ষুদিত পাষাণ (১৯৬০), দেবী (১৯৬০), তিন
কন্যা (১৯৬১), ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১), অতল জলের আহ্বান (১৯৬২), বেনারসী
(১৯৬২), অভিজান (১৯৬২), সাত পাকে বাঁধা (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), কিনু
গোয়ালার গলি (১৯৬৪), বাক্স বদল (১৯৬৫), কাপুরুষ (১৯৬৫), একই অঙ্গে এত রূপ (১৯৬৫), আকাশ
কুসুম (১৯৬৫), মণিহার (১৯৬৬), কাঁচ কাটা হীরে (১৯৬৬), হাটে বাজারে (১৯৬৭),
অজানা শপথ (১৯৬৭), বাঘিনী (১৯৬৮), তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯), পরিণীতা (১৯৬৯),
অপরিচিত (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), প্রথম কদম ফুল (১৯৭০), মাল্যদান
(১৯৭১), স্ত্রী (১৯৭২), বসন্ত বিলাপ (১৯৭৩), অশনি সংকেত (১৯৭৩), সোনার
কেল্লা (১৯৭৪), সংসার সীমান্তে (১৯৭৪), দত্তা (১৯৭৬), জয় বাবা ফেলুনাথ
(১৯৭৮), দেবদাস (১৯৭৯), গণদেবতা (১৯৭৯), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), কোণি
(১৯৮৪), ঘরে বাইরে (১৯৮৪), আতঙ্ক (১৯৮৬), গণশত্রু (১৯৮৯), শাখা প্রশাখা
(১৯৯০), তাহাদের কথা (১৯৯২), মহাপৃথিবী (১৯৯২), হুইল চেয়ার (১৯৯৪), পারমিতার
একদিন (২০০০), দেখা (২০০১), আবার অরণ্যে (২০০২), পাতালঘর (২০০৩), পদক্ষেপ (২০০৬),
দ্য বং কানেকশন (২০০৬), চাঁদের বাড়ি (২০০৭), স্যাডো অব টাইমস্ (২০১১), নোবেল
চোর (২০১২), মাছ, মিষ্টি অ্যান্ড মোর (২০১২), অলীক সুখ (২০১৩), রূপকথা নয়
(২০১৩), দূরবিন (২০১৪), বেলাশেষে (২০১৫)।
সৌমিত্র
চট্টোপাধ্যায় অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটক:
তাপসী (১৯৬৩), নামজীবন (১৯৭৮), রাজকুমার (১৯৮৩), ফেরা (১৯৮৭),
নীলকণ্ঠ (১৯৮৮), ঘটক বিদায় (১৯৯০), দর্পণে শরৎশশী (১৯৯২), চন্দনপুরের চোর (১৯৯৪),
টিকটিকি (১৯৯৫)।
সৌমিত্র
: বাঙালির আন্তর্জাতিকতার ধারকমুদ্রা:
তিনশোর উপর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি, সেই সৌমিত্র
চট্টোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, ‘অভিজ্ঞতা এবং ত্যাগ কখনও বিফলে যায় না’।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যেন আজও জীবনের ধূসর-উজ্জ্বল-সবুজ-নতুন পাতা, অবশ্যই জীবন
এবং চমৎকৃত করে দেওয়া এক চিরতারুণ্য! আর তাই বিরাশিতম জন্মদিনের আগের এক আলোচনার
আসরে আশ্চর্য রকম অকপট সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমি এখন পুরনো প্যান্টের
ছেঁড়া পকেট, ঝাড়লে শুধু মৃত্যু সংবাদ বেরোয়’। তিনি আরো জানান, ‘উত্তমদাকে আমি
সুচিত্রার চেয়ে অনেক এগিয়ে রাখি।’ তিনি আরো বলেন, ‘অভিনয়ে না থাকা মানে জীবন থেকে
খসে যাওয়া। অভিনয় ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না’—ঠিক এমনটাই সাবলিল দুই বাঙলার
অভিনয় জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রতিভা নাকি সর্বকালে সর্বদেশেই বিরল। উক্তিটি যাঁর তিনি
বিখ্যাত চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ রায়। সেই প্রতিভাবান পরিচালক সত্যজিতের সঙ্গে
সবচেয়ে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায় তাঁর
সাতাশটি ছবির চৌদ্দোটিতে প্রধান ভূমিকায় নিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।
পরিচালক সত্যজিৎ শিখিয়েছেন অনেক, কিন্তু নায়কের জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন
মানুষটির ভিতরে এক পিতৃপ্রতিম ব্যক্তিত্বের সন্ধান পেয়েছিলেন সৌমিত্র। সত্যজিৎ
রায়ের ১৪টি ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আপনাকে কতটা আলোড়িত করে? এমন প্রশ্নের জবাবে
বলছেন, “পথের পাঁচালির দ্বিতীয় পর্ব ‘অপরাজিত’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে
সত্যজিৎ রায় একজন অভিনেতা খুঁজতে থাকেন। ঘটনাচক্রে সেই চরিত্রে আমার অভিনয় করার
সুযোগ হয়। সুধীজনের আগ্রহ ও দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় তিনি পরবর্তী সিনেমা ‘অপুর
সংসার’-এ আমাকে কাজ করতে সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে কাজ করার বহু স্মৃতি আজও ঋদ্ধ
করে।”
অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়ে বলছেন, ‘আমার বাবা পেশায়
একজন উকিল হলেও তিনি ছিলেন খুবই সংস্কৃতিমনা মানুষ। বাবাকে একান্ত নিমগ্নতায় অভিনয়
আর আবৃত্তি করতে দেখেছি। এসব দেখেই একসময় অভিনয় ও আবৃত্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বাবা
আমাকে বোঝাতেন কীভাবে অভিনয় করতে হয়, আবৃত্তি করতে হয়। এভাবে চিন্তার ক্রমাগত
উৎকর্ষতায় পরবর্তীতে কলকাতায় শিশির কুমার ভাদুরীর অভিনয় দেখে অভিনয়ের প্রতি ব্যাপক
আগ্রহ বাড়ে। এখনতো অভিনয় ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না।’ তিনি আরো বলছেন,
‘ছেলেবেলায় চেহারা নিয়ে খুব হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। তবে এর কারণ ছিলো। টাইফয়েড
হয়েছিলো। রোগা পটকা ছিলাম। বাড়ির লোকেরা বলতো, এ রকম একটা ছেলে হলো আমাদের
বাড়িতে! একে তো কালো, তার ওপর নাক-চোখ তেমন নেই।মনে মনে সংকোচ বোধ করতাম।
খেলাধুলোতে উৎসাহ ছিলো; তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো না। একবার একনাগাড়ে ৬৩ দিন
জ্বর ছিলো শরীরে। ডাক্তার বাবু আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। শরীর আরও ভেঙে যায়। পড়াশোনা
মোটামুটি করতাম—এমন নয় যে সবাই ধন্য ধন্য করবে। কিন্তু খুব ছোটবেলা থেকে যখনই
অভিনয় করতাম, সবাই ভালো বলত। ওই লোভটা আমার ভেতরে দ্রুত বেড়ে উঠেছিলো। ভাবলাম,
অভিনয় করলে নিজেকে আড়াল করা যাবে। সবাই ভাববে, এ তো অভিনয় করছে, বাস্তবে এমন না।’
সৌমিত্র কৃতজ্ঞতার সাথে সবসময় স্মরণ করেন সত্যজিৎ রায়কে, তিনি
বলেছেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের দান অন্তরে ধারণ করে রেখেছি’। আবার এই তিনিই সম্প্রতি এক
সাক্ষাৎকারে ‘আত্মঘাতী বাঙালি’কে নিয়ে বলেছেন অনেক ভাব-ভাবনার কথা। একবুক কষ্ট
নিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘খেটে খাই, চুরি করি না, এই অহঙ্কারটাই এখন আর
নেই। একটা পরিবারে বাবা-জ্যাঠা-কাকা, তারা যদি দুর্নীতিকে দুর্নীতি বলে মনে না
করে, তা হলে ছেলেপুলেরা কী শিখবে? অফিসার থেকে মন্ত্রী থেকে দলে দলে দুর্নীতিতে
ডুবে আছে, সেটাই স্বাভাবিক বলে মেনে নিচ্ছে, এর প্রভাব তো পড়বেই। আগে দেখেছি, আমার
আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই দেখেছি, হয়তো কেউ হাইকোর্টের জজ, তাঁর কোনো বাড়ির লোক বা
বন্ধুবান্ধব জড়িত আছেন এমন কোনও মামলা থাকলে সেটা কিছুতেই নিজের এজলাসে নিতেন
না।’
বাঙালি মানসিকতায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে বলে তাঁর কষ্ট। সৌমিত্র
চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাঙালি কিন্তু দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয়
প্রজন্মের বাঙালিরা পৃথিবীর সর্বত্র নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। সেখানে, তাদের
মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির ভিউপয়েন্ট কিছুটা সংকীর্ণ
হয়ে গেছে, এটা মানতেই হবে। এর মধ্যে হয়তো একটা কূপমণ্ডূকতা আছে। এটা আগেও ছিলো,
প্রাদেশিকতায় বাঙালি আগেও ফার্স্ট হতো। তবে এখন সেটা আরও বেড়েছে বলে মনে হয়।
বাঙালি চিরকালই উন্নাসিক। যখন সে নানা দিক থেকে পিছিয়ে পড়লো, তখন ওই উন্নাসিকতাই
তার একটা আশ্রয় হয়ে দাঁড়ালো। ইতিহাসে দেখেছি, এই যে একটা হেরো জাত, তাদের একটা
ভয়ানক পাল্টা অভিমান জন্মায়। আমাদেরও বোধহয় সেই অভিমান থেকে সংকীর্ণতাবাদ আসছে।
বাঙালি যেন অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে কতকগুলো ঢালের পিছনে আত্মরক্ষায়
ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সবচেয়ে বড় ঢাল হলেন রবীন্দ্রনাথ। যে কোনো বিষয়ে বাঙালি বলে,
‘আমাদের রবীন্দ্রনাথ আছেন।’ আমি বলি, তুমি কী করো? রবীন্দ্রনাথ তো বাঙালিকে বড়
করেই ভেবেছিলেন। তুমি কি সে-রকম চেষ্টা করেছ? রবীন্দ্রনাথ সর্ব অর্থেই এক জন
ইন্টেলেকচুয়াল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে পালিয়ে বেড়াতেন, কিন্তু কী বিরাট
পড়াশোনা! শুধু জীবনস্মৃতি পড়লে দেখা যাবে, ওই কয়েক বছরের মধ্যে তিনি যা পড়াশোনা
করেছেন, লোকে এমএ ক্লাসেও পড়ে না।”
বাঙালির জানার স্পৃহাও কমে গেছে বলে তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ
রয়েছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘শুধু শিল্প, সংস্কৃতির চর্চার কথা তো নয়, সব
কিছুরই তো চর্চা হওয়া দরকার। বিজ্ঞানের চর্চা দরকার। সে চর্চা আসতে দেরি হয়েছে।
অনেক দিক থেকে বাধা এসেছে। ঔপনিবেশিক আমলেও বাধা ছিলো। গোঁড়ারা পছন্দ করতো না।
সাহেবরা নিজেরাও অবশ্য পছন্দ করতো না, তারা চেয়েছিলো কেরানি তৈরি করতে, ব্যস;
বাঙালির বিজ্ঞানচর্চায় তারাই বাধা দিয়েছে। পরেও আমরা এই বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দিতে
পারিনি। বিজ্ঞানের মেধার স্ফূর্তি হয়নি, অথবা অন্যত্র চলে গেছে, কারণ এখানে সুযোগ
নেই। বিজ্ঞানচর্চার দুর্বলতা মানসিক সংকীর্ণতা বৃদ্ধির একটা বড় কারণ। এবং তার
পাশাপাশি ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সংস্কারের আধিপত্য। সেই আধিপত্য কিন্তু বাঙালির মানসলোকে
বরাবরই প্রবল। মনে রাখতে হবে, বিদ্যাসাগরকে বাঙালি ক্ষমা করেনি। ব্রাহ্মণসন্তান,
সংস্কৃতজ্ঞ, কিন্তু স্পষ্ট জানালেন, বেদবেদান্ত কলেজে পড়ানোর প্রয়োজন নেই, বেকন
পড়া দরকার। এই বৌদ্ধিক প্রাগ্রসরতাকে রক্ষণশীল বাঙালি সমাজ মানবে কী করে? শেষ
জীবনে মানুষটিকে সাঁওতাল পরগনায় স্বেচ্ছানির্বাসন নিতে হয়েছিলো।’
আমাদের আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্যও
স্মরণযোগ্য। তিনি বলছেন, ‘প্রথমে হয়তো মানুষ কিছুটা বাধ্য হয়ে করে। ধরা যাক এক জন
শিক্ষক, তাঁর যা মাইনেপত্র তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল, তিনি প্রাইভেট টিউশন শুরু
করলেন, টিউটোরিয়াল খুললেন। তার পর আস্তে আস্তে সেটার লোভে পড়ে গেলেন, এখন
হচ্ছে—ভালো খাবো ভালো পড়বো ভালো গাড়ি চড়বো, ফলে টিউটোরিয়াল থেকে টাকা রোজগারটাই
আসল হয়ে দাঁড়াল, ক্লাসের পড়ানোয় আর মন নেই। দুর্নীতি যখন ঢোকে, প্রথমটা চেনা যায়
না। তবে একটা জিনিস বোধহয় আমাদের মনে রাখা উচিত। আমি একেবারেই পণ্ডিত নই, কিন্তু
আমাদের দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে মনে হয়, আগেকার আমলে, এমনকী মোগল আমলেও সম্ভবত
এতটা দুর্নীতি ছিলো না। ভয় ছিলো, বাদশার কানে পৌঁছলে গলা কাটা যাবে। কুণ্ঠাহীন
লুণ্ঠন বোধহয় সাহেবদের প্রণোদিত করেছে দুর্নীতিতে, তাই তা আমাদের মধ্যে ঢোকাতে
তাদের কোনো দ্বিধা হয়নি। আজকের তরুণ প্রজন্মের সামনে কী আছে? শিক্ষা নেই, কাজ নেই,
স্কিল নেই। দুঃখ লাগে। …তবে এরই মধ্যে আশার আলো এখনও বিদুৎ চমকের মতো মাঝে মাঝে
দেখি ওই তরুণদের মধ্যেই—তাদের বোধহয় কণ্ঠরোধ হয় না। তারাই হয়তো নতুন কালের
সত্যিটাকে খুঁজে আনবে।’
অভিনয়শিল্পীর কী ধরনের গুণাবলী জরুরি বলে মনে করেন? এমন
প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘অভিনেতার কাছে মানুষ বিষয়, সমাজ বিষয়। যে অভিনেতা শুধু
আত্মপ্রদর্শন করে তাকে আমার বড় অভিনেতা মনে হয় না। বড় অভিনেতা তার অভিনয়ে সমাজের
বিভিন্ন অনুষঙ্গ দেখায়। অভিনয় করতে করতেই মানুষ শেখে।’
পেশাদারী নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে কী ধরনের সংকট ও সম্ভাবনা রয়েছে
বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘বাঙলার পেশাদারী নাট্যচর্চার
ইতিহাস প্রায় শত বছরের। কিন্তু কখনও এর অগ্রগতির সীমা কমেছে আবার কখনও প্রসারিত
হয়েছে। এভাবে চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে চলছে এসব কর্মযজ্ঞ। তবে আমরা অনেক সময়
পেশাদারিত্বের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলি। থিয়েটারে সবচেয়ে বড় কথা হলো
আমাদের দায়বোধ এবং এর প্রতি ভালোবাসা। সর্বোত্তম ক্ষমতা দিয়ে সৃজনশীল মানুষকে
তুষ্ট করতে হলে সে দায়কেই মূল উপজীব্য মনে করতে হবে। ভেতরে ভালোবাসা না থাকলে শিল্পের
কোনো মাধ্যমেই খুব বেশি কিছু করা যায় না।’
নাটকের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি জানান, ‘অভিজ্ঞতা এবং ত্যাগ কখনও
বিফলে যায় না। যেমন যায়নি অতীতে, ভবিষ্যতেও যাবে না হয়তো। সেই সঙ্গে সমাজ, রাষ্ট্র
ও মানুষের জীবনের সঙ্গে মিল রেখে কতটুকু প্রাসঙ্গিক আমাদের নাটক সেটার ওপরও
অনেকাংশে নির্ভর করে।’ মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে কি
আলাদা করে তৈরি করতে হয়? তিনি বলছেন, ‘প্রথমত অভিনয়। তারপর, পরিবেশ বুঝে উপস্থাপন।
এতে আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। যিনি ছবি আঁকেন তিনি ছোট ক্যানভাসেও আঁকতে
পারেন, বড় ক্যানভাসেও আঁকতে পারেন। সে-ই সত্যিকার অভিনেতা, যে সমাজের
ভাবনা-চিন্তা, অবস্থা প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিতে পারেন।’
অভিনয়ের জন্য কি আবৃত্তিটা বিশেষ প্রয়োজন? এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেছিলেন, “আবৃত্তি অভিনয়ের জন্য ভীষণ রকম দরকার। যারা এটা বোঝে না, তারা
এখনো চোখ বুজে আছে। অভিনয়ের প্রারম্ভিক কাজ কথা বলা, সেটা আবৃত্তিচর্চা ছাড়া হয়
না। আমি প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে আবৃত্তি ও গান
করি। সর্বোপরি একজন অভিনেতাকে চার অক্ষরের একটি শব্দকে আঁকড়ে রাখতে হয়, তা
হলো—ভালোবাসা। ভালোবাসা ছাড়া কিছু হয় না। আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছেই
আমার ‘ঋষি ঋণ’। রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ নিয়ে আমার পরিবারের লোকেরাও নানা কথা বলতো। ওই
সময়ে আবৃত্তির রেকর্ডিংগুলো খারাপ মানের ছিলো। তবে দেশের বাইরে যে দুই একটা
রেকর্ডিং আছে, তা শুনেই বুঝেছি, তাঁর কণ্ঠে কী গভীরতা ছিলো।”
হাসপাতালে
৪১ দিনের যুদ্ধের পর মহাপ্রয়াণের পথে:
গত ১ অক্টোবর
থেকে বাড়িতে থাকাকালীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না। প্রথমে জ্বরে
আক্রান্ত হন। তবে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে করোনার নমুনা
পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৬ অক্টোবর তাঁকে ভর্তি
করানো হয় কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে। এখানে সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর তাঁর করোনার নমুনা
পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। চিকিৎসা চলছিলো।
২৪ অক্টোবর
রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার মূলত অবনতি হতে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তিনি চেতনাহীন
হয়ে পড়েন। তাঁকে সুস্থ করার জন্য প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়। এর আগে কিডনির ডায়ালাইসিস
করা হয়। সৌমিত্রর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ১৬ সদস্যের চিকিৎসা দলের সদস্যরা দুশ্চিন্তায়
পড়ে যান। শেষ মুহূর্তে ফুসফুসে আরও বেশি করে অক্সিজেন পৌঁছানোর জন্য বাড়ানো হয়েছিলো
অক্সিজেনের মাত্রা। এ সময় তাঁর চিকিৎসা দলের প্রধান ক্রিটিক্যাল বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর
জানিয়েছিলেন, এই চেতনা স্তর ৩-এ নেমে গেলে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্রেন ডেথ হিসেবে বিবেচনা
করা হয়। তাঁকে বিভিন্ন ধরনের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অরিন্দম করের ভাষায়, ‘মনে হচ্ছে,
তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমাদের ৪১ দিনের লড়াই যথেষ্ট নয়। আপাতত আমাদের নতুন কিছু
বলার নেই। তিনি যাতে ভালো হয়ে ওঠেন, সবাইকে সেই প্রার্থনা করতে হবে।’ চিকিৎসকেরা প্রাণপণে
চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন অরিন্দম কর। অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে।
১৫ নভেম্বর ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ
হাসপাতালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। ১২টা ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর ঘোষণা
দেওয়া হয়। শেষ হাসপাতালের ৪১ দিনের যুদ্ধ। হাসপাতাল সূত্র বলছে, কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথির
কারণেই সব রকম চিকিৎসার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে উপমাহাদেশজুড়ে। শোকাচ্ছন্ন মানুষের চোখের জলে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত। বাঙালির আন্তর্জাতিকতার ধারকমুদ্রা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ বিদায় ছিলো রাজসিক। তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।