আপনারা অবগত আছেন, একাত্তরের ঘাতকচক্র ইসলামী ছাত্র সংঘের
বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলা সম্পর্কে। তখন আমরা হারিয়েছিলাম স্বজন, একজন, দু’জন, শতজন,
হাজারজন নয়; আমরা হারিয়েছিলাম ত্রিশ লক্ষ গর্বিত বাঙালিকে, সম্ভ্রম হারিয়েছিলো
আমার তিন লক্ষ মা-বোন। নয়টা মাস যে তিন লক্ষ নারী পাকিস্তানি সেনাদের বাঙ্কারে
গণ-ধর্ষিতা হয়েছেন, গর্ভাবস্থায়-রজঃস্বলাসহ সব ধরণের অবস্থায় পাকিস্তানিরা যাঁদের
এক টুকরো কাপড় পরতে দেয়নি পাছে এই শাড়ি বা ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়, চুল কেটে
দেওয়া হতো পাছে চুল জড়িয়ে গলায় ফাঁসি না নেয়...। কতো শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ঘরের
মেয়ের পর্যন্ত শেষ আশ্রয় হয়েছে পতিতালয়ে... পাগল হয়ে মরেছেন তাঁরা মধ্যবয়সে।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্র শিবির নাম
ধারণ করে। ছাত্র শিবির পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে বিগত বছরগুলোতে যেই হারে
হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো এই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো
নয়।
জামাত-শিবিরের ক্ষেত্রে সন্ত্রাস রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিক
ব্যাপার। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে এই চক্র ১৯৭১ সালে মানুষকে হত্যা করেছে, ঘরে আগুন
দিয়েছে, মা-বোনের সম্ভ্রম লুটেছে। এখনও হত্যা, রগ কাটা অব্যাহত রেখেছে। এখনও
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা মেধাবী ছাত্র ও
ছাত্রলীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হত্যার কর্মসূচি পালন করে
যাচ্ছে। এসব ঘটনা ’৭১-এর বুদ্ধিজীবি নিধনেরই ধারাবাহিকতা। মূলত তারা চায় দেশের
শিক্ষাঙ্গনকে অস্থিতিশীল রেখে জাতির বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করতে। শিবিরের নৃশংসতার
খতিয়ান অনেক লম্বা। কিছুদিন যাবত তাদের রগ কাটার কর্মসূচি বন্ধ থাকলেও এখন তা আবার
নতুন করে শুরু হয়েছে বলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে পাক হানাদারদের যারা সহযোগিতা করতো
সেই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠনের নাম ছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘ। ১৯৭৭ সালে
পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা ইসলামী ছাত্র শিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে।
বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য সর্বস্তরে নিন্দিত জামায়াতে ইসলামীর
এই ছাত্র সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় জবাই করে হত্যার রাজনীতি শুরু করে
চট্টগ্রাম থেকে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে হামলা-সহিংসতা-সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। তবে
এক্ষেত্রে অপরাপর ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে শিবিরের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। শিবির
সরাসরি হত্যার মিশনে নামে। তাছাড়া এরা যাকে আঘাত করে তাকে চিরতরে পঙ্গু বা অচল করে
দেয়। এর মাধ্যমে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মীটিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার এবং
অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদেরকে সাবধান করে। এইজন্য শিবিরের নৃশংসতার সাথে
অন্য কারো তুলনা হয় না। হাতুড়ি, রড, ইট, মুগুর দিয়ে হাড় গুড়ো করে দেওয়া, হাত ও
পায়ের রগ কেটে দেওয়া, চোখ উপড়ে ফেলা, মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা, কব্জি কেটে নেওয়া,
কিরিচ, ছোরা, কুড়াল ব্যবহার করে হত্যা করার মতো নৃশংসতা এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর
মধ্যে কেবল শিবিরের নামের সাথেই যুক্ত। আসুন ইতিহাসের গলি ঘুরে ক্যালেন্ডারের
পাতায় দেখে আসি ছাত্র শিবির কর্তৃক হত্যাযজ্ঞ।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক হত্যাযজ্ঞের
বিবরণ:
১৯৮১ সালের মার্চ: প্রতিষ্ঠার
মাত্র ৩ বছরের মাথায় শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস
ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা
করে। কিরিচের এলোপাতাড়ি কোপে গুরুতর আহত তবারক যখন পানি পানি করে কাতরাচ্ছিলো তখন
এক শিবিরকর্মীরা তাঁর মুখে প্রস্রাব করে দেয়।
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩টি যাত্রীবাহী বাস ভর্তি বহিরাগত
সন্ত্রাসী নিয়ে এসে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের উপর
হামলা চালায়। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ৮২ সালের ১১ মার্চ শিবির ক্যাম্পাস থেকে
পালিয়ে যাবার পর ছাত্রলীগ খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করলে শিবিরের কজন সন্ত্রাসী প্রশাসন
ভবনের সামনে অকষ্মাৎ ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা করে রাকসু জিএস খন্দকার জাহাঙ্গীর
কবির রানা, ছাত্রলীগ সভাপতি বজলার রহমান ছানা (প্রয়াত বিচারপতি), ছাত্রলীগ নেতা
আমিরুল আলম মিলনকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে হবিবুর রহমান হল ছাত্র
সংসদের ভিপি, লিয়াকত আলী তালুকদার, লাল পান্না (জয়পুর হাট), আইন বিভাগের ছাত্র
রবিউল আলম বুদু (বর্তমান সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবি) ও সাখাওয়াত হোসেন
সাখোসহ আরো কয়েকজন দ্রুত এসে তাদেরকে উদ্ধার করে এসএম হলে সাখোর রুমে নিয়ে যায়।
তারপর শুরু হয় পুলিশি অ্যাকশন। যে যার মত ক্যাম্পাস থেকে সরে যায়। পরের দিন ১২
মার্চ লিয়াকত আলী তালুকদার, লাল পান্না, রবিউল আলম বুদু ও সাখোসহ ৮/১০ জন সকাল ১০
টার দিকে শহীদ শিক্ষক জ্বোহার কবরের পাশে সমবেত হয়ে প্রশাসন ভবনের পশ্চিম মাঠে
(যেখানে আগের দিন ১১ মার্চ শিবির সমবেত হয়েছিলো) প্রায় শূন্য ক্যাম্পাসে সংক্ষিপ্ত
প্রতিবাদ সভায় সাখাওয়াত হোসেন সাখো তার বক্তব্যে, ক্যাম্পাসে শিবির তথা
সাম্প্রদায়িক শক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারপর কমপক্ষে ১০ বছর তা বলবৎ
ছিলো।
১৯৮৪ সাল: চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫ নম্বর কক্ষে
শিবিরকর্মীরা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মেধাবী ছাত্র শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা
করে, এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আহত হয় অসংখ্য ছাত্রলীগকর্মী। তৎকালীন চট্টগ্রাম
কলেজ ছাত্র শিবির সভাপতি সৈয়দ জাকিরের নেতৃত্বে শাহদাত হোসেনকে জবাই করা হয়।
শাহদাত হত্যাকাণ্ড মামলার অন্যতম চার্জশিটভুক্ত আসামী সৈয়দ জাকির, কিন্তু অদৃশ্য
কারণে জামিনে থেকেই খোদ রাজধানী ঢাকার বুকে প্রকাশ্যে রমরমা প্রকাশনা ব্যবসা করে
যাচ্ছে এই ঘৃণিত খুনী, বর্তমানে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশক এই কুখ্যাত খুনি
ছাত্র শিবিরের সৈয়দ জাকির।
১৯৮৬ সাল: শিবিরকর্মীরা ডান হাতের কবজি কেটে নেয় ছাত্রনেতা আবদুল
হামিদের। পরবর্তীতে ওই কর্তিত হাত বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ
করে।
১৯৮৮ সালের ৩১ মে: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ প্রধান ছাত্রাবাসের সামনে কলেজের
প্রিন্সিপাল ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ ও শত শত শিক্ষার্থীদের সামনে
ছাত্রমৈত্রীর নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে
শিবিরের ক্যাডাররা, এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আহত হয় অসংখ্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর
কর্মীরা।
১৯৮৮ সাল: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তাঁর নিজ
বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা, তাঁর খণ্ডিত মাথা তাঁর বাড়ির
প্রধান দরজার সামনে পুরো দিন ঝুলিয়ে রাখে।
১৯৮৮ সালের জুলাইর প্রথম
সপ্তাহ: বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের হামলায়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমির আলী হল ছাত্র সংসদের জিএস ও জাসদ ছাত্রলীগ নেতা
প্রিন্সসহ ২০ থেকে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে।
১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই: ভোর সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মাখদুম
হলে বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা হামলা চালায় এবং জাসদ ছাত্রলীগের রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি ও সিনেট সদস্য আইয়ূব আলী খান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার
সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য আহসানুল কবির বাদল এবং হল সংসদের ভিপি নওশাদের
হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এই ঘটনায় প্রতিবাদ করতে আহত হয় ছাত্রলীগের অসংখ্য
নেতাকর্মী।
১৯৮৮ সাল: সিলেটে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগ নেতা মুনীর, জুয়েল ও তপনকে
বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে।
১৯৮৮ সালের আগস্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো.
ইউনুসের বাসভবনে ছাত্র শিবির বোমা হামলা করে। এতে অধ্যাপক ইউনুস বেঁচে গেলেও তাঁর
বাড়ির কর্মচারী আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে।
১৯৮৯ সালের রমজান মাস: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র গাজী গোলাম মোস্তফাকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী চপাড়ায় ইফতারের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতের রগ কেটে
দেয় ছাত্র শিবির ক্যাডাররা, আজও পঙ্গুত্ব নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি।
১৯৮৯ সালের নভেম্বর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে
সন্ধ্যায় জাসদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর শিবিরের বোমা হামলায় দুইজন নিহত এবং
ছাত্রনেতা বাবু, রফিকসহ ১০ জন আহত হয়।
১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর: ছাত্রমৈত্রীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি
ফারুকুজ্জামান ফারুককে শিবিরের ক্যাডাররা জবাই করে হত্যা করে তাঁর খণ্ডিত মাথা
প্রকাশ্য রাস্তায় দুই ঘন্টা রেখে দেয়।
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ: পবিত্র রমজান মাসে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র শিবির সভাপতি সৈয়দ
জাকিরের (বর্তমানে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশক) নিয়ন্ত্রণাধীন কুখ্যাত
সিরাজুস সালেহীন বাহিনীসহ কয়েক হাজার সশস্ত্র বহিরাগত ছাত্র শিবির সন্ত্রাসী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেলা ১১ টার সময় অতর্কিত হামলা চালালে ছাত্রলীগ
নেতা ইয়াসির আরাফাত পিটু নিহত হয় এবং ছাত্রলীগের আইভি, নির্মল, লেমন, রুশো, জাফু,
ফারুক এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের রাজেশসহ প্রায় দেড় শাতাধিক ছাত্র-ছাত্রী
আহত হয়। এদের অধিকাংশেরই হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয় এবং রাজেশের কব্জি কেটে ফেলা
হয়। এই হামলার সময় শিবির ক্যাডাররা শাহ্ মাখদুম হল, আনোয়ার হল এবং লতিফ হল আগুন
দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ব্যাপক আকারে গান পাউডারের ব্যবহার করায় হলের জানালার কাঁচগুলো
গলে গিয়েছিলো। লতিফ হলের অনেকগুলো কক্ষ এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এই হামলার
তীব্রতা এতটাই ছিলো যে, বেলা ১১টায় শুরু হওয়া হামলা রাত ৩টায় বিডিআর নামানোর আগ
পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।
১৯৯২ সালের মে: ছাত্র শিবিরের ছাত্রী উইং ইসলামী ছাত্রী সংস্থা রাজশাহী কলেজ
শাখার নেত্রী মুনীরা বোমা বহন করার সময় বিষ্ফোরণে মারা যায় এবং তার
সহযাত্রী-সহকর্মী আপন খালা এবং ওই রিকশাওয়ালা আহত হয়, এই মুনীরা ওই সময়ে আটজন
সাধারণ মানুষকে বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করে।
১৯৯২ সালের ১৯ জুন: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে দেশের প্রধান যুদ্ধাপরাধী
গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে
মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ওই
আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুকিম মারাত্মকভাবে আহত হয়, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুন
তিনি মারা যান।
১৯৯২ সালের আগস্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী নতুন বুথপাড়ায় শিবির
ক্যাডার মোজাম্মেলের বাড়িতে বোমা বানানোর সময় শিবির ক্যাডার আজিবরসহ অজ্ঞাতনামা
অন্তত আরো তিনজন নিহত হয়। বিষ্ফোরণে পুরো ঘর মাটির সাথে মিশে যায় এবং টিনের চাল
কয়েক’শ গজ দুরে গাছের ডালে ঝুলতে দেখা যায়। পরবর্তীতে পুলিশ মহল্লার একটি ডোবা
থেকে অনেকগুলো খণ্ডিত হাত পা উদ্ধার করে। যদিও শিবির সাংগঠনিকভাবে আজিবর ছাড়া আর
কারো মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি। পুলিশ বাদী হয়ে মতিহার থানায় শিবির ক্যাডার
মোজাম্মেলকে প্রধান আসামী করে বিষ্ফোরক ও হত্যা মামলা দায়ের করে। প্রায় ৫ বছর
পলাতক থাকার পর মামলা ম্যানেজ করে মোজাম্মেল এলাকায় ফিরে আসে এবং জামাতের
রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হয়ে খুনের রাজনীতিতে ফিরে আসে।
১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর
সশস্ত্র হামলা চালালে ছাত্রলীগ ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মিলে গঠিত সর্বদলীয়
ছাত্র ঐক্যের ওপর শিবিরের হামলায় ছাত্রনেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র এবং ছাত্র
ইউনিয়নের তপনসহ ৫জন ছাত্র নিহত হয়।
১৯৯৯ সাল: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এনামুল হকের ছেলে
মোহাম্মদ মুছাকে শিবিরকর্মীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে তার মাথা বাসার গেটের সামনে
ঝুলিয়ে রাখে।
১৯৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর: বহিরাগত সশস্ত্র শিবির কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের মেধাবী
ক্রিকেটার জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
১৯৯৪ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসার পথে তৃতীয় বিজ্ঞান
ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয়
শিবির কর্মীরা।
১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি: শিবির কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী চৌদ্দপাই
নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকাল-সন্ধ্যা বাসে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রীর
নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যার আগে বর্বর শিবির ক্যাডাররা তাঁর হাত ও পায়ের রগ কেটে নেয়।
১৯৯৬ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংস্কৃতিকর্মী আমান উল্লাহ
আমানকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্র
শিবিরের ক্যাডারেরা এবং অন্য একজন ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এদের বাঁচাতে
এসে দুইজন সহপাঠী ছাত্রী এবং একজন শিক্ষকও আহত হয়।
১৯৯৭ সাল: চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য শিবির
ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও ছাত্রনেতা ফরিদউদ্দিন আহমদকে গুলি করে
মৃত্যু নিশ্চিত করার পরেও পায়ের রগ কেটে পুনরায় নিশ্চিত হয় ওরা মৃত।
১৯৯৭ সাল: বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি
অধ্যাপক আবদুল খালেকসহ প্রায় কুড়িজন শিক্ষকের বাসায় বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে
ছাত্র শিবির ক্যাডারেরা।
১৯৯৭ সাল: গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত শিবির
সন্ত্রাসীদের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম পুলিশ ক্যাম্পেও বোমা হামলা করে শিবির ক্যাডারেরা।
১৯৯৮ সাল: শিক্ষক সমিতির মিটিং থেকে ফেরার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
শহীদ মিনারের সামনে অধ্যাপক মো. ইউনূসের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্র শিবিরের
ক্যাডারেরা। ছাত্র-কর্মচারীদের প্রতিরোধে সেই যাত্রায় অধ্যাপক ইউনূস প্রাণে বেঁচে গেলেও
মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।
১৯৯৯ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ৭১-এর গণকবরে স্মৃতিসৌধ
নির্মাণের জন্য স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তর রাতের আঁধারে ছাত্র শিবির ভাঙতে গেলে
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী বাঁধা দেন। ফলে শিবির ক্যাডাররা তাঁকে কুপিয়ে আহত
করে এবং ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে ফেলে।
১৯৯৮ সালের ২২ আগস্ট: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সঞ্জয়
তলাপাত্রকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা।
২০০০ সাল: চট্টগ্রামের বদ্দারহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে
থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা
করে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও পায়নি নিহতের পরিবারেরা।
২০০১ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হলে বহিরাগত অনুপ্রবেশকে
কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত ছাত্রী বিক্ষোভে সশস্ত্র শিবির কর্মীরা কমান্ডো স্টাইলে
হামলা চালায় এবং ছাত্রীদেরকে লাঞ্ছিত ও রক্তাক্ত করে।
২০০১ সালের অক্টোবরের শেষ
সপ্তাহ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎ
কুমার সাহাকে ছাত্র শিবির কর্মীরা হাত-পা বেঁধে জবাই করার চেষ্টা করে, কিন্তু
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা টের পাবার ফলে, তাদের হস্তক্ষেপে তিনি প্রাণে বেঁচে
যান।
২০০২ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা
সুশান্ত সিনহাকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় শিবির কর্মীরা; এই
ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে ছাত্রলীগের সাথে ব্যাপক আকারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়
শিবিরের।
২০০৪ সালের ২৫ জুলাই: শিবির ক্যাডার রবি ও রোকনের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের
একটি দল রাজশাহী ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত সিনহার ওপর হামলা চালায়। ইট
দিয়ে জখম করার পামাপাশি তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালায় শিবির ক্যাডাররা,
এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রফ্রন্টের পাশে এসে দাঁড়ায় আজন্ম প্রগতিশীল ছাত্রলীগ।
২০০৪ সাল: পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে বহিরাগত
অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত ছাত্রী বিক্ষোভে সশস্ত্র ছাত্র শিবির কর্মীরা
হামলা চালায়।
২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর: অধ্যাপক মো. ইউনূসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাবার সময় কুপিয়ে হত্যা
করা হয়। যদিও এই হত্যা মামলায় ছাত্র শিবির ও জেএমবির দুইজন সদস্যকে ফাঁসি দেওয়া
হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে দুই দফায় ছাত্র শিবির তাকে হত্যার চেষ্টা
করেছিলো।
২০০৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর: বরিশালের বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি
শামীম আহমেদকে শিবির ক্যাডাররা কুপিয়ে ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর: জামাতের বর্তমান রাজশাহী মহানগরের আমীর আতাউর রহমান এবং
প্রক্টর নূরুল আফসারের উপস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মিছিলে হামলা
চালিয়ে শিবির ক্যাডাররা প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে রক্তাক্ত করে।
২০০৫ সালের ১০ ডিসেম্বর: সন্ধ্যায় জুবেরী ভবনের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র
ইউনিয়নের সভাপতি এস এম চন্দনের ওপর হামলা চালিয়ে তার রগ কেটে নেওয়ার চেষ্টা চালায়
শিবির ক্যাডাররা।
২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতপন্থী শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং
ছাত্র শিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীনসহ আরো দুইজন শিবির ক্যাডার মিলে একযোগে
অতর্কিত হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু
তাহেরকে হত্যা করে।
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘সেকুলারিজম ও শিক্ষা’
শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার অপরাধে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান
আজিজুল হককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার ওপর হামলা চালায় ছাত্র শিবির।
প্রকাশ্য সমাবেশে তারা অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের গলা কেটে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে
দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা
করে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।
২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে
পরিণত করে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির কর্মীরা। এর পিছনে মদদ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক সমিতিসহ প্রগতিশীল নামধারী কিছু শিক্ষক। এখানে জাবি ভিসি’র মুক্তিযোদ্ধা
পরিচয় নিয়ে কটাক্ষ করা হয়, এবং ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর’ বলে শ্লোগাণ দেওয়া
হয়।
২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি: মতিঝিলের ব্যাংক কর্মচারী জাফর মুন্সীকে রড দিয়ে পিটিয়ে
গুরুতর আহত করে শিবির ক্যাডারেরা। মাথা থেতলে দেওয়া হয় জাফর মুন্সীকে। পরে
হাসপাতালে বসে মারা যান জফার মুন্সী।
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল: জঙ্গি ছাত্র শিবির ও হিযবুত তাহরিরের সশস্ত্র কর্মীদের
কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় বুয়েট ছাত্র আরিফ রায়হান দ্বীপের ওপর হামলা চালানো হয়।
বুয়েট ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তরা তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তিন মাসের মাথায়
চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্কয়ার হসপিটালে মারা যান দ্বীপ। দ্বীপকে খুনের অপরাধে মেজবাহ
নামের বুয়েটের এক ছাত্রকে গ্রেফতারের পর দ্বীপের ওপর হামলায় ছাত্র শিবিরের জড়িত
থাকার বিষয়টি সামনে আসে।
২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে চট্টগ্রাম শহর থেকে দলীয় অনুষ্ঠান
শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের তিনশ’য়ের উপরে নেতাকর্মীর উপর
আক্রমণ করে হাজারের উপরে শিবির ক্যাডারেরা, এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় প্রায় সব
নেতাকর্মী; মৃত্যুবরণ করেন তিনজন, পঙ্গুত্ববরণ করে এখনো বেঁচে আছেন প্রায় ৬০ জন
নেতাকর্মী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট: শোক দিবসের আলোচনা শেষে আমীর আলী হল থেকে মাদার বখশ্ হলে
ফেরার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনের
ওপর অতর্কিত হামলা চালায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সদস্যরা। তুহিনের
পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়, হাতের আঙুল কেটে নেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে, ছাত্রলীগ নেতা টগর
ও মাসুদের উপর হামলা করে শিবির ক্যাডারেরা, কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়ে টগর সুস্থ্য
হলেও, এক পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে এখনো বেঁচে আছে মাসুদ।
২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর: ছাত্র শিবিরের নেতৃত্বে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই
এলাকায় নিজের বাসার একটু সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ
কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ
এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মতিহার থানায় একটি হত্যা
মামলা দায়ের করেন।
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল: ছাত্র শিবিরের নেতৃত্বে সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায়
নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয় ইংরেজি বিভাগের
অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। পরের বছরের ৬ নভেম্বর ছাত্র শিবিরের ৮
জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা
মামলার রায় ঘোষণা হলো আজ মঙ্গলবার। এতে দুইজনের ফাঁসি ও তিনজনের যাবজ্জীবন
কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
২০২০ সালের ১ মার্চ: ১ মার্চ রোববার রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানুল্যাপুর
ইউনিয়নের নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের পলোয়ানের পুল বাজারের একটি চায়ের দোকানে আড্ডা
দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। রাত ৮টার দিকে একদল শিবির কর্মী এলোপাতাড়ি গুলি করে
এবং কুপিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের আহত করে। এ সময় রাকিব হোসেন ও হাবিব নামে ২ জন
গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন রনি, মনু ও রায়হান। পরের দিন সোমবার (২ মার্চ) দুপুরে ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত রাকিব হোসেন
আমানুল্যাহপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শিপন পাটোয়ারী বাড়ির সফি উল্যার ছেলে। তিনি
আমানুল্যাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
উপসংহার: ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ছাত্র শিবির কর্তৃক হত্যাযজ্ঞের
মাত্র সামান্য কিছু ক্ষতিয়ান দিলাম, এছাড়াও অসংখ্য ঘটনা এখনো আড়ালেই রয়ে গেছে;
সামনে হয়তো আরো আছে, কে জানে কখন কে ওদের আক্রোশের শিকার হয়! তাছাড়া আরিফ আজাদ
নামক ছাত্র শিবিরের এক জঙ্গি সদস্য ‘প্যারাডোক্সিক্যাল সাজিদ’ নামে একটি বই লিখে
তা কৌশলে কিশোরদের মধ্যে বিলি করে জঙ্গি তৈরির নতুন মিশনে নেমেছে। রহস্যজনকভাবে
এখনও পুলিশ আরিফ আজাদকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। আর আপনি আমি কিংবা
মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ ওদের হাতে নিরাপদ নই; তাই আসুন সময় থাকতে আমরা সতর্ক হই। প্রতিরোধ
গড়ে তুলে ওদের নির্মূল করি ত্রিশ লক্ষ্য শহীদের রক্তস্নাত এই বাংলাদেশ থেকে; এই
মাটির মান আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।