হোমপেজ
নিয়াজী যেভাবে আত্মসমর্পণ করলেন
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
2017-01-31
368
১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির মহান বিজয় দিবস। এই বিজয়কে ছিনিয়ে আনার জন্য যুগে যুগে সংগ্রাম এবং যুদ্ধ করে এসেছিল বাঙালি জাতি। ১৭৫৭ সালের পর থেকে বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য সন্তর্পণে যুদ্ধ করছিল। যার শেষ পরিণতি ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই বিজয়ের কথা মনে হলে, মনে পড়ে ১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরের কথা, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের কথা। মনে পড়ে ফরায়েজী, ফকির নীল বিদ্রোহ, মাস্টার দা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম এবং তিতুমীরের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা। মহান নেতাদের মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা, যাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের ফলে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই বহু আকাক্সিক্ষত বিজয়। এই মহান বিজয় দিবসে আরও মনে পড়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। যাদের আত্মত্যাগ এবং পরিকল্পনামাফিক যুদ্ধ করে আমরা বরাবর পাক-হানাদারদের তাদের ৯৩ হাজার সৈন্য এবং অসংখ্য গোলাবারুদ থাকা সত্ত্বেও পরাজিত করে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছি। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী মনে করেছিল বাঙালি জাতিকে অপারেশন সার্চলাইট করে শেষ করে দিবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা তা করতে পারে নাই। তারা জানত না এবং বুঝত না বাঙালি জাতির শক্তির মহিমা কতটুকু। যখন তারা বুঝতে পারছে, তাদের পিঠ দেয়ালে গিয়ে লেগেছে তখন তারা হার মানতে বাধ্য হয়েছে। তাই আজ আমি এই মহান দিনে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক পরাজিত সৈনিক লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী মুক্তি এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে কিভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তা অতি সংক্ষেপে স্বাধীনতা যুদ্ধের চরমপত্র ‘পাঠক’ এবং লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক এম.আর. আখতার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’ বই থেকে সঙ্কলন করে লিখছি। আশা করি, পাঠকগণ তা পড়ে খুবই উপকৃত হবেন। পাকবাহিনী এ অঞ্চলে তাদের পরাজয় বুঝতে পেরে যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারত আক্রমণ করে। তখন ভারত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে করে পাল্টা আক্রমণ করে। ভারত এবং পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং নামকরণ করা হয় মিত্র বাহিনী। ভুটান ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এবং ভারত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

দুই.
এদিকে ঢাকায় ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে তখন বিষাদের ছায়া। সাত, আট, নয় ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কেবল বিভিন্ন রণাঙ্গনের পরাজয়ের খবর এসে পৌঁছল। বিশ্বের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের যুদ্ধে ব্যর্থতার সংবাদ ইথারে ভেসে এলো। ব্রিগেডিয়ার বশির ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যূহ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু করলেন। লে. জেনারেল নিয়াজী গবর্নর হাউসে ডা. মালেকের সঙ্গে গোপনে বৈঠকে প্রতিটি রণক্ষেত্রে তার বাহিনীর পরাজয়ের কথা স্বীকার করলেন এবং যুদ্ধ বিরতির জন্য প্রেসিডেন্টের নিকট তারবার্তা পাঠাবার অনুরোধ করলেন। পরদিন গবর্নর মালেকের কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে সাইফারে তারবার্তা অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি এবং রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হচ্ছে। ইয়াহিয়া এই তারবার্তার বিশেষ গুরুত্ব দিলেন না। কেননা যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনারেল নিয়াজীর কাছ থেকে রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোন জবাব দেয়া সম্ভব নয়। ৯ ডিসেম্বর ইস্টার্ন হেড কোয়ার্টার থেকে পিন্ডিতে লে. জেনারেল নিয়াজীর সিগন্যাল গেল। জেনারেল নিয়াজীর এই সিগন্যালের পর পাকিস্তান সামরিক জান্তার টনক নড়ল। পূর্ব রণাঙ্গনের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে সে রাতেই গবর্নর মালেক ও জেনারেল নিয়াজীর কাছে সিগন্যাল এলো-
“প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে গভর্নর এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কাছে কপি আপনার জরুরী তারবার্তা পেয়েছি। আমার কাছে প্রেরিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে আপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমতি দেয়া হলো। আন্তর্জাতিক মহলে আমি সম্ভাব্য সব রকমের ব্যবস্থা করব। কিন্তু যেহেতু আপনাদের কাছ থেকে আমরা বিছিন্ন হয়ে রয়েছি। যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব নেয়াটা আপনাদের বিষয় বুদ্ধি ও সুবিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম। আপনি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবেন, আমি তা অনুমোদন করব। আমি জেনারেল নিয়াজীকেও আপনার গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং এতদসম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছি। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। জেনারেল নিয়াজী বিবিসির প্রচারিত এক সংবাদে দারুণভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। খবরটা ছিল, জেনারেল নিয়াজী তার সৈন্যবাহিনীকে ফেলে রেখে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেছেন, উত্তেজিত অবস্থায় আকস্মিকভাবে তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (বর্তমানে শেরাটন) লাউঞ্জে এসে হাজির হলেন। চিৎকার করে বললেন, “কোথায় গেল বিবিসির সংবাদদাতা? আমি তাকে বলতে চাই যে, আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমি এখনও পূর্ব পাকিস্তানে রয়েছি। আমি কখনও আমার সৈন্যদের ফেলে যাব না।”

তিন.
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বিকাল সাড়ে তিনটায় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে বহুল প্রত্যাশিত তারবার্তা পেলেন। তারবার্তা পাওয়ার পর নিজের কর্তব্য সম্পর্কে চিন্তা করতে শুরু করলেন। কিভাবে এবং কোন অবস্থায় অগ্রসর হওয়া উচিত হবে। গবর্নর ডা. আঃ মালেক থেকে শুরু করে সমস্ত মন্ত্রী ও সেক্রেটারি সবাই এদিকে সম্পর্কছেদ করে নিরপেক্ষ ‘জোন’ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তাই জেনারেল নিয়াজী আলোচনার জন্য মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ডেকে পাঠালেন। দু’জনে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত দিলেন যে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন দূতাবাসের মধ্যস্থতা মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে? শেষ পর্যন্ত জেনারেলদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকায় তখন মার্কিন কনসাল জেনারেল হচ্ছেন মি. এস. পিভ্যাক। সন্ধ্যার সময় গোপনে দু’জনে দেখা করতে গেলেন মার্কিন কনসাল জেনারেলের সঙ্গে। সবকিছু শুনে মার্কিনী কূটনীতিবিদ বললেন, “জেনারেল আমি তো আপনাদের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা করতে পারি না। তবে আপনারা চাইলে আপনাদের বার্তাটুকু জায়গামতো পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।” এরপর মি. এস. পিভ্যাকের অফিসে বসেই ভারতীয় আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল স্যাম মানেক শ-এর জন্য বিশেষ বার্তা লেখা হলো। এতে বলা হল যে, “১) পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী এবং সহযোগী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা। ২) মুক্তিবাহিনীর হামলার মোকাবিলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং ৩) আহত ও রুগ্ন সৈন্যদের এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমরা রাজি আছি।” পরবর্তীকালে এ মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে যে, মার্কিন কনসাল এস পিভ্যাক এই বার্তা সরাসরি জেনারেল মানেক শ-এর কাছে কিংবা দিল্লীতে পাঠাননি। তিনি বার্তা পাঠিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে। সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে রাওয়ালপিন্ডিতে সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করেন। অনেকের মতে জঙ্গী প্রেসিডেন্ট এ সময় অতিমাত্রায় সুরা পান এবং অন্যান্য ধরনের কু-অভ্যাসে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় আর্মি চীফ অব স্টাফ এবং মিত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেক শ-এর কাছ থেকে ছোট্ট একটা বার্তা এসে পৌঁছাল। অবিলম্বে আমার অগ্রগামী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে, আপনার বাহিনী এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা বিধান করা হবে (পৃঃ ২৮০, আমি বিজয় দেখেছি)। এদিকে জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় ও মিত্র বাহিনীর প্রধানের নিকট থেকে বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানি বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল আঃ হামিদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ১৫ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডি থেকে জবাব এলো, “প্রদত্ত শর্ত মোতাবেক যুদ্ধবিরতি করার পরামর্শ দিচ্ছি। এদিকে ঢাকায় তখন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। বিরতিহীন কারফিউয়ের জন্য আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যোগাযোগ নাই বললেই চলে। চারদিক থেকে কেবল নৃশংস হত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পিতৃহারা এতিম বাচ্চার ফরিয়াদে খোদার আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে। প্রায় সবাই তখন ঢাকা নগরীতেই পলাতকের জীবন যাপন করছে।

চার.
রাজধানী ঢাকা নগরীর ওপর লে. জেনারেল নিয়াজী ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তার চীফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বারেককে ডেকে বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বিভিন্ন কমান্ডে পাঠাবার জন্য একটা জরুরী বার্তা খসড়া তৈরির নির্দেশ দিলেন। এক পৃষ্ঠাব্যাপী এই নির্দেশে সাহসিকতাপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য প্রশংসা জ্ঞাপনের পর অবিলম্বে সবাইকে নিকটবর্তী ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হলো। এই নির্দেশে আত্মসমর্পণ শব্দ উল্লেখ করা না হলেও শেষদিকে একটা বাক্যে বলা হলো যে, “দুঃখজনকভাবে এর অর্থ হচ্ছে সমরাস্ত্র জমা দিতে হবে।” জেনারেল মানেক শ বেতার মারফত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেন। এই আহ্বানের শেষে বলা হলো, এর পরও যদি আমার আবেদন মোতাবেক আপনি পুরো বাহিনীসহ আত্মসমর্পণ না করেন তাহলে পূর্ণোদ্যমে আঘাত হানার জন্য আমি ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার পর নির্দেশ দিতে বাধ্য হব। উপরন্তু জেনারেল শ’র এই আহ্বান উর্দু এবং ইংরেজীতে প্রচারপত্র আকারে বিমানযোগে বাংলাদেশের সর্বত্র বিতরণ করা হলো। এই সময় পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করে চলে আসেন। এদিকে ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকা প্রতিরক্ষা ব্যূহ সুদৃঢ় করার দায়িত্বে লিপ্ত ব্রিগেডিয়ার বশির অস্থির হয়ে উঠলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় ব্রিগেডিয়ার বশির অত্যন্ত দ্রুত কিছু সৈন্য সংগ্রহ করে মেজর সালামতকে মিরপুর ব্রিজ পাহারা দিতে পাঠালেন। এ মর্মে তিনি নির্দেশ দিলেন যে, প্রয়োজন মতো এ ব্রিজ উড়িয়ে দিতে হবে। মেজর সালামত তার সৈন্য এবং ইপাকাফ সদস্যদের নিয়ে পজিশন নেয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই মেজর জেনারেল নাগরা তার অগ্রবর্তী কমান্ডো বাহিনী নিয়ে মিরপুর ব্রিজের অপর পারে আমিনবাজারে এসে পৌঁছলেন। সঙ্গে স্বয়ং কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনীর কিছু সদস্য। মেজর জেনারেল নাগরা নিয়াজীর উদ্দেশে একটি চিরকুট লিখলেন, “প্রিয় আব্দুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর ব্রিজে। আপনার দূত পাঠান।” (আমি বিজয় দেখেছি, পৃঃ২৮৩) ১৬ ডিসেম্বর ভোরে মিরপুর ব্রিজের কাছে জেনারেল নাগরা রাস্তায় পায়চারী করার সময় মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে কুয়াশার মাঝ দিয়ে ঢাকা নগরীর ঝাপসা চেহারাটা দেখার চেষ্টা করছেন। তাকে খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছিল। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে ঢাকা নগরীকে মুক্ত করার কৃতিত্ব তিনি কি লাভ করতে পারবেন? মিরপুর ব্রিজের পাদদেশে দাঁড়িয়ে হরদেব সিং ক্লার, সন্ত সিং আর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আলাপ করে জেনারেল নাগরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এই মুহূর্তে জেনারেল নিয়াজীর কছে দূত পাঠাতে হবে। একটা জিপের সামনে বিরাট আকারের সাদা ফ্ল্যাগ তৈরি করা হলো। ২ কমান্ডো ব্যাটালিয়নের দু’জন অফিসার ও ড্রাইভার জিপে উঠল। এরপর জেনারেল নাগরা একটা বার্তা নিয়াজীর উদ্দেশে লিখলেন : ‘প্রিয় আব্দুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর ব্রিজে। ঘটনার পরিসমাপ্তি হয়েছে। পরামর্শ হচ্ছে, আপনি আমার কাছে আত্মসমর্পণ করুন। সে ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেব। শীঘ্র আপনার প্রতিনিধি পাঠান, ‘নাগরা’। ১৬ ডিসেম্বর সকাল পৌনে নয়টা নাগাদ জেনারেল নাগরা এই তারবার্তা তার এডিসির হাতে দিয়ে তাকেই নির্দেশ দিলেন জিপে নিয়াজীর কাছে যাওয়ার জন্য। সাদা ফ্ল্যাগ উড়িয়ে জিপটা ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারে এসে পৌঁছল। অবাক বিস্ময়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা এই ভারতীয় জিপটাকে দেখছিল। তখন ঘড়িতে সকাল নয়টা। হেডকোয়ার্টারে বসে রয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর টাইগার বলে পরিচিত লে. জেনারেল নিয়াজী। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বীরত্বসূচক মিলিটারি ক্রস বিজয়ী মেজর জেনারেল জমসেদ, ধূর্ত মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং নৌবাহিনীর আঞ্চলিক প্রধান রিয়ার এডমিরাল শরীফ। জেনারেল নাগরার বার্তা হাতে নিয়ে পড়ার পর নিয়াজীর চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলে। তিনি কোন কথা না বলে চিঠিটা অন্যদের পড়ার জন্য দিলেন। উপস্থিত সবাই বার্তাটা দেখলেন। মিনিট কয়েকের জন্য সেখানে কবরের নিস্তব্ধতা নেমে আসল।

পাঁচ.
রাও ফরমান প্রথমে কথা বললেন। তাহলে জেনারেল নাগরাই আলোচনার জন্য এসেছে? এ প্রশ্নের কেউই জবাব দিলেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জেনারেল নাগরাকে অভ্যর্থনা জানাবে নাকি সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে? জেনারেল নিয়াজীকে উদ্দেশ করে আবার রাও ফরমান জিজ্ঞেস করলেন আপনার হাতে কি ঢাকার জন্য কিছু রিজার্ভ সৈন্য আছ? নিয়াজী এবারও কোন জবাব দিলেন না। শুধু জেনারেল জমসেদের দিকে তাকালেন। রাজধানী ঢাকা নগরীর দায়িত্বে নিয়োজিত মেজর জেনারেল জমসেদ মুখে কিছু না বলে মাথাটা নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন যুদ্ধ করার মতো ঢাকায় আর কোন রিজার্ভ সৈন্য নেই। রিয়ার এডমিরাল শরীফ এবং রাও ফরমান প্রায় একই সঙ্গে বললেন, “এই যখন পরিস্থিতি তাহলে নাগরা যা বলছে তাই করুন।” (উইটনেস টু সারেন্ডার,পৃঃ ২১০ সিদ্দিক সালিক) শেষ পর্যন্ত আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, জেনারেল জমসেদ যাবেন জেনারেল নাগরাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর ব্রিজ এলাকায় প্রহরারত পাকিস্তানি সৈন্যদের নিকট জরুরী নির্দেশ পাঠানো হলো।

যুদ্ধ বিরতির কথাবার্তা হচ্ছে, তাই জেনারেল নাগরার ঢাকা নগরীতে প্রবেশের সময় যেন কোন বাধা দেয়া না হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা নগরীতে মনোবলহীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যূহ একটা তাসেরঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বার্লিন, প্যারিস কিংবা লেনিনগ্রাদের মতো কিছুই এখানে হলো না। অনেকের মতে, জেনারেল নিয়াজী পুরা মাত্রায় যুদ্ধ শুরু করার আগেই পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। একটু পরেই সাদা ফ্ল্যাগ উড়িয়ে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর জিপ মিরপুর ব্রিজের ওপর দিয়ে এগিয়ে এলো। মুহূর্তের মধ্যে ২ কমান্ডো বাহিনী গুলি শুরু করলে অনেক কষ্টে তাদের বিরত করা হলো। জিপ থেকে একজন পাকিস্তানি মেজর নেমে জেনারেল নাগরাকে স্যালুট দিয়ে নিয়াজীর আত্মসমর্পণের বার্তা প্রদান করে জানাল যে, ব্রিজের পশ্চিম ধারে লে. নিয়াজীর পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য মেজর জেনারেল জমসেদ অপেক্ষা করছেন। একটু পরেই জেনারেল নাগরা, কাদের সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার ক্লার সাদা ফ্ল্যাগওয়ালা জিপে মিরপুর ব্রিজের পশ্চিম ধারে এসে উপস্থিত হলেন। জিওসি জমসেদ তাদের ঢাকা নগরীতে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিজের স্টাফ গাড়িতে বসার অনুরোধ করলেন। তখন সকাল সাড়ে দশটা। জেনারেল নাগরাকে নিয়ে জীপটা ইস্টার্ন কমান্ড হেড কোয়ার্টারে আসার পর ব্রিগেডিয়ার বারেক সবাইকে অভ্যর্থনা জানিয়ে একটা সাজানো কক্ষে বসতে অনুরোধ করলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই লে. জেনারেল নিয়াজী আন্ডার গ্রাউন্ড টেকনিক্যাল হেডকোয়ার্টার থেকে নিজস্ব অফিসে এস হাজির হলেন। জেনারেল নাগরা ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে করে মেজর জেনারেল জমসেদ এসে ঘরে ঢুকতেই নিয়াজী ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে নাগরার সঙ্গে করমর্দন করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। জেনারেল নাগরার কাঁধে মুখটা এলিয়ে দিয়ে নিয়াজীর বিরাট দেহটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। নিয়াজী চিৎকার করে পাঞ্জাবীতে বললেন, “পিন্ডিতে হেডকোয়ার্টারের বেজন্মারা আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী।” নিয়াজীর কান্না থামিয়ে একটু ঠা-া হতেই জেনারেল নাগরা তার সহকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করলেন। প্রথমেই কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী। নাগরা যখন কাদের সিদ্দিকীর পরিচয় দিচ্ছিলেন তখন জেনারেল নিয়াজী, জেনারেল জমসেদ আর ব্রিগেডিয়ার বারেক এই বাঙালি যুবকের আপদমস্তক নিরীক্ষণ করছিলেন। জেনারেল নাগরা তার বক্তব্যের শেষে বললেন, ‘এই হচ্ছে সেই টাইগার সিদ্দিকী।’ জেনারেল নিয়াজী করমর্দনের জন্য কাদের সিদ্দিকীর দিকে হাত এগিয়ে দিলেন। সবাইকে হতবাক করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তার হাত সরিয়ে নিয়ে ইংরেজীতে বললেন, “যারা নারী ও শিশু হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে করমর্দন করতে পারলাম না বলে আমি দুঃখিত। আমি আল্লাহর কাছে জবাবদিহিকারী হতে চাই না।”

ছয়.
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুপুর প্রায় বারোটা নাগাদ কলকাতাস্থ থিয়েটার রোডে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে খবর এসে পৌঁছলে যে, ঢাকায় হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণে সম্মত হয়েছে। এই মুহূর্তে মিত্রবাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক জেনারেল নাগরা এবং কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী ঢাকায় ইস্টার্ন কমান্ড হেড কোয়ার্টারে আছেন। সব দিকে তখন আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করল। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল (অব.) ওসমানীকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। ওসমানী সাহেব তখন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সাথে একান্তে আলাপ করে সবশেষে বললেন, নো, নো প্রাইম মিনিস্টার, মাই লাইফ ইজ ভেরি প্রেসাস, আই কান্ট গো (না, না প্রধানমন্ত্রী, আমার জীবনের মূল্য খুব বেশি আমি যেতে পারব না, আমি বিজয় দেখেছি পৃ: ২৮৭, এম.আর.আখতার মুকুল)। তখন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে খন্দকারকে পাক সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পাঠান। এ.কে খন্দকার সাহেব প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের কথামতো তখন নির্বাসিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। হঠাৎ খবর আসল যে, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বিশেষ আর্মি হেলিকপ্টারে মেজর জেনারেল জ্যাকব এসে পৌঁছাবেন। বেলা একটায় ব্রিগেডিয়ার বারেক তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে জেনারেল জ্যাকব এবং কর্নেল খোরাকে সঙ্গে নিয়ে এলেন। জ্যাকবের হাতে সেই ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের দলিল। জেনারেল নিয়াজী এই দলিলকে যুদ্ধ বিরতির খসড়া চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করলেন। জেনারেল জ্যাকব ঐতিহাসিক দলিলটি সবার সামনে ব্রিগেডিয়ার বারেকের হাতে দিলেন। বারেক কয়েক পা এগিয়ে জেনারেল রাও ফরমান আলীর টেবিলে দলিলটা খুলে ধরলেন। একটু নজর বুলিয়ে রাও ফরমান আলী আপত্তি উত্থাপন করে বললেন, “ভারত ও বাংলাদেশের জয়েন্ট কমান্ডারের কাছে কথাটা তো থাকতে পারে না? আমরা তো ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করব।” জেনারেল জ্যাকব তখন উত্তরে বললেন, “দিল্লী থেকে এভাবেই এই দলিল তৈরি হয়ে এসেছে। ইহার কোন পরিবর্তন বা সংশোধন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” তারপর কর্নেল খেরা বলে উঠলেন, এটা তো আমাদের আর বাংলাদেশের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা মাত্র। এরপর জেনারেল নিয়াজী দলিলটা একনজর দেখে কোন মন্তব্য না করে রাও ফরমানের হাতে ফিরিয়ে দিলেন। জেনারেল ফরমান তার বসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমাদের কমান্ডারই বলতে পারবেন যে, তিনি এই দলিল মেনে নিবেন, না প্রত্যাখ্যান করবেন?” জেনারেল নিয়াজী কোন জবাবই দিলেন না। প্রায় ১০/১৫ সেকেন্ড ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারা দিলেন। উপস্থিত সবাই তখন বুঝতে পারল যে, টাইগার নিয়াজী নামে খ্যাত জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম থেকে সস্ত্রীক হেলিকপ্টারে তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে হাজির হলেন। লে. জেনারেল নিয়াজী তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়ে স্যালুট করার পর করমর্দন করলেন। সে এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য। কিছুক্ষণ পর তার কাছেই নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। বেলা সোয়া চারটা নাগাদ শিখ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝ দিয়ে জেনারেল নিয়াজী ও অন্যদের সঙ্গে করে জোর কদমে এগিয়ে চললেন আত্মসমর্পণ মঞ্চে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪.৩১ মি: পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষে লে. জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর প্রধান (বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড) জগজিৎ সিং অরোরার নিকট আত্মসমর্পণ করেন অর্থাৎ আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করলেন। লাখ, লাখ জনতা এবং শতাধিক বিদেশী সাংবাদিক এই অনুষ্ঠান অবলোকন করলেন। এর পর দু’ পক্ষের সেনাপতিরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য জেনারেল নিয়াজী তার রিভলভারটা এবং ইউনিফরম-এর কাঁধ থেকে মেজর জেনারেল র্যাঙ্ক ব্যাজ দুটো খুলে জেনারেল অরোরার হাতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে দিলেন। পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর বাকি সমস্ত সদস্য অস্ত্র সমর্পণ ও ব্যাজ খোলার আনুষ্ঠানিকতা পালন করল। ঢাকা শহরের সমস্ত বাড়িতে গাঢ় সবুজের বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত পতাকা উড়তে শুরু করল। লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিরা মিছিল বের করল। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা পেলাম একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র- নাম তার বাংলাদেশ। (আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিল)
(বি.দ্র. উৎস-আমি বিজয় দেখেছি পৃঃ ২৭৪-২৯২ পৃঃ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অংশগুলো সঙ্কলন করে লেখা হয়েছে।)

গ্রন্থপঞ্জি:
(১) বাংলাদেশ ও প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস- জাতীয় শিঃ ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড- ঢাকা।
(২) আমি বিজয় দেখিছি- এম.আর.আখতার মুকুল।
(৩) স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি- আঃ মতিন।
(৪) নিয়াজির আত্মসমপর্ণের দলিল- সিদ্দিক সালিক।

লেখক : মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।